ঢাকা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৫:১৪:২৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

ধর্ষিতাকে তালাক ধর্ষককে মুক্তি থানার ভেতরে পুলিশের সালিস

| ২৭ আশ্বিন ১৪২১ | Sunday, October 12, 2014

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচারের বদলে তাঁর কপালে জুটেছে স্বামীর তালাক। গ্রাম্য মাতবর, ধর্ষক-পুলিশ যোগসাজশ ও পরিবার অসহায় হওয়ায় ওই গৃহবধূর জীবন এখন বিপন্নপ্রায়। অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রথমে গ্রাম্য মাতবররা পরে থানার পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে। ফলে অসহায় ওই গৃহবধূ ধর্ষণের বিচার তো পাননি, উল্টো হারিয়েছেন স্বামী-সংসার। তবে পুলিশ বলছে, দুই পক্ষের সম্মতিতে আপস-মীমাংসা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর অভিযোগ, ধর্ষক মহিদুরকে (১৮) থানায় ধরে এনেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিরল থানার উপপরিদর্শক আশরাফুল থানা চত্বরে মনগড়া সালিস বসিয়ে ধর্ষককে জরিমানার নামে ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর উপস্থিতিতে গৃহবধূর তালাক হয়েছে। ফলে একদিকে ধর্ষণের শিকার, অন্যদিকে স্বামীর তালাক পেয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই গৃহবধূ। এলাকাবাসী, গৃহবধূর পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে উপজেলায় বরাহনগর গ্রামের বাসিন্দা মহিদুর কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। এরপর ঘটনা জানাজানি হলে পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে গ্রামে প্রথম দফায় সালিস বসে। সেই সালিসে গ্রাম্য মাতবররা গৃহবধূর অভিযোগ তোয়াক্কা না করে ধর্ষকের কাছে মীমাংসার জন্য লক্ষাধিক টাকা দাবি করে। ওই সালিসে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রানীপুকুর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান হাকিম, পরিষদের বর্তমান মেম্বার রাজা দশরত চন্দ্র রায়, জগেশ চন্দ্র রায়, সাবেক ইউপি সদস্য পলেন চন্দ্র রায়সহ স্থানীয়রা। এরপর খবর পেয়ে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে সালিসে পুলিশ ফোর্সসহ নিয়ে হাজির হন বিরল থানার উপপরিদর্শক আশরাফুল। তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে গৃহবধূসহ ধর্ষক মহিদুরকে থানায় নিয়ে যান। এরপর রাতভর উভয়কে থানা হেফাজতে আটকে রাখেন। পরে গৃহবধূর স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়। গৃহবধূর অভিযোগের পরও ধর্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ধর্ষককে ছেড়ে দিতে অর্থচুক্তি করেন উপপরিদর্শক আশরাফুল। সেই মোতাবেক পরদিন শুক্রবার সকালে থানা চত্বরেই আবারও সালিস বসে। এ সময় ধর্ষকের কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ওই গৃহবধূর স্বামী পুলিশের উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে এফিডেফিটের মাধ্যমে তালাক দেন। এরপর স্বামীর কাছে থেকে আদায় করা হয় আরো ৭০ হাজার টাকা। পরে টাকাসহ গৃহবধূকে পাঠানো হয় তাঁর বাবার ঘরে। থানা চত্বরের সালিসে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগম সোমা এবং পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমাকান্তসহ স্থানীয়রা। তবে উপপরিদর্শক আশরাফুল আলম জানান, সালিসে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূকে নগদ ৫২ হাজার টাকা দিয়েছে ধর্ষক পরিবারের লোকজন। গৃহবধূর পক্ষে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গ্রামের সালিসে উপস্থিত রানীপুকুর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান হাকিম জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি সাজানো। স্ত্রীকে রাখবেন না বলেই তাঁর স্বামী চক্রান্ত করেছেন। আপসের জন্য এক লাখ টাকা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে ওই গৃহবধূর বড় ভাই জানান, চক্রান্ত করে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। কিন্তু নানা চক্রান্তের কারণে তাঁর এ অবস্থা হয়েছে। নানা ভয়ভীতির কারণে আমরা সব মেনে নিয়েছি। তা ছাড়া মামলা চালানোর মতো আর্থিক সমর্থ নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে বিরল থানার ওসি আব্দুল হাই সরকার জানান, মুসলিম ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ। বুধবার রাতে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁর স্বামী। ঘটনাটি ধর্ষণ নয়। ভিন্ন ধর্মের কারণে আটক ছেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। বিষয়টি পরদিন বৃহস্পতিবার স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে উপপরিদর্শক আশরাফুল আলম ঘটনাস্থল থেকে উভয়কে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর শুক্রবার সালিসে নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতেই ছিল তারা। স্বামীর সঙ্গে সংসারে আগ্রহী নন ওই গৃহবধূ। ওই গৃহবধূকে বলা হয়েছে আপস নিষ্পত্তির বিষয়ে আপত্তি থাকলে যেকোনো সময় মামলা নেওয়া হবে।