ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:৩৭:২০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

চোখের জলে অভিজিৎকে চিরবিদায়

| ২৩ ফাল্গুন ১৪২১ | Saturday, March 7, 2015

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের মরদেহ আনা হলে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানায়।সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক অভিজিৎ রায়ের মরদেহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে পরিবার। গতকাল দুপুর ১টার দিকে কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীম আরা মরদেহটি গ্রহণ করেন। এর আগে হাজারো মানুষের চোখের জলে শ্রদ্ধা নিবেদন ও চিরবিদায় জানানো হয়েছে মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়কে। এদিকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশের যে অবহেলা ছিল তা নিয়ে খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দুটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল করিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটিকে সহযোগিতা করার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে আরো একটি সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্র এ তথ্য জানায়। শ্রদ্ধা ও বিদায় : গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদেনের জন্য রাখা হয় অভিজিতের মরদেহ। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে অপরাজেয় বাংলায় এসে উপস্থিত হয় অভিজিৎকে বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্স। এর আগেই ফুল হাতে অপেক্ষায় ছিলেন বন্ধু, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। অভিজিতের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বুয়েটে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ আনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে তাঁর আক্রান্ত হওয়ার স্থানে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর মরদের নেওয়া হয় তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অজয় রায়ের বড় মগবাজারের বাসায়। এ সময় সেখানে শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অভিজিতের কফিনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু, ভাই-বোন, স্বজনরা। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শয্যাশায়ী মা শেফালী বেগম মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১টার দিকে মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিক্যালে প্রিয় সন্তানের লাশ সারা জীবনের জন্য দান করার সময় অধ্যাপক অজয় রায় চিকিৎসকদের বলেন, ‘ছেলের ইচ্ছা অনুযায়ী লাশ আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম। আশা করি, তা চিকিৎসাবিদ্যার কাজে ব্যবহৃত হবে।’ অভিজিতের বাবা অজয় রায় তাঁর ছেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই শোকার্ত মুহূর্তে আমার কথা বলার ক্ষমতা নেই। তবে আমার মনে হয়, মৌলবাদী ও ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সরকারের একটি ব্যর্থতার প্রতীক। কারণ মৌলবাদীরা যখন তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল, তখন আমি আইজিপি, ডিআইজি সবাইকে জানিয়েছিলাম। তার পরও এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে, তারা কত দরিদ্র, কত ব্যর্থ।’ তিনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিচারহীনতায়ই একের পর এক হত্যা : শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবার মুখেই একই কথা- মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তা চর্চাকারী ব্যক্তিদের হত্যা করা হলেও কোনো বিচার হয় না। এর ধারাবাহিতকতায় উগ্রপন্থীগোষ্ঠী ক্রমাগতভাবে তালিকা তৈরি করে হত্যা করছে। অভিজিৎ হত্যাকারীদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। গতকাল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে অভিজিৎকে শ্রদ্ধা নিবেদনের কার্যক্রম চলে। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশীদ, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, ছাত্রলীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খুশি কবিরের নেতৃত্বে ‘নিজেরা করি’, রোকেয়া কবিরের নেতৃত্বে ‘নারী প্রগতি সংঘ’, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ মুক্ত ও প্রগতিশীল চিন্তার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তি। অভিজিৎ রায়ের পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ হাসান ইমাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুস, শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আইনজীবী সারা হোসেন, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল? এটা আমার নিজের কাছে প্রশ্ন, রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন। একই জায়গায় বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদকে মারা হয়। অভিজিৎ একজন গবেষক, লেখক। সে বই লিখেছে, তার মত প্রকাশ করেছে। এ জন্য কি তার জীবন নিতে হবে? তাকে হত্যা করে হত্যাকারীরা যেন আমাদের সংবিধানকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলল।’ তিনি প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান; একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়, সেদিকে নজর রাখার কথা বলেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি মুক্তচিন্তার মানুষদের ক্রমাগত হত্যা করছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।’ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অভিজিৎকে হত্যা হলো মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত। অভিজিতের মরদেহ পড়ে থাকার সময় তার স্ত্রী সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। অন্যের সাহায্যে আমরা যদি এগিয়ে না আসি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের বিপদেও কেউ এগিয়ে আসবে না। অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকেই তালিকা তৈরি করে মুক্তমনা মানুষকে হত্যার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। মৌলবাদের শত্রু হচ্ছে মুক্তচিন্তা ও যুক্তি। মুক্তচিন্তাকে হত্যা করতেই এ ধরনের ঘটনা ক্রমাগতভাবে ঘটছে। কিন্তু জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জঙ্গিদের টপলিস্টে রয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আর কত লাশ দেখতে হবে আমাদের? মুক্তচিন্তাকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে ওরা ক্রমাগত অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশ থাকলেও কেন তাদের গ্রেপ্তার করলে না? অবিলম্বে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘লেখক হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতের হত্যা একইসূত্রে গাঁথা। এই খুনিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে।’ সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যা চলছে তা বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লালনকারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।’ বুয়েটে মানববন্ধন : অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছে। সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কালের কণ্ঠ