ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:১৯:০৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

গেন্ডারিয়ায় অর্পিত সম্পত্তিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

| ১৮ আষাঢ় ১৪২৩ | Saturday, July 2, 2016

আতঙ্কে দিন কাটছে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার কালী চরণ সাহা রোডের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অনেকে বাড়ির বাইরেও বের হচ্ছেন না। নিজ বাড়িতে থাকতেও সাহস পাচ্ছেন না এলাকার পূজা কমিটির সদস্য এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এলাকায় এখন থমথমে অবস্থাই বিরাজ করছে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরে অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফসিলভুক্ত (সরকারের খাস জমি) জায়গায় মসজিদ নির্মাণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানদের এই বিরোধ এখন তুঙ্গে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই মাস আগে এখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২৪ জুন শুক্রবার এখানে জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় করা হয় এবং সেই থেকে এখনও নিয়মিত নামাজ আদায় করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মসজিদের নাম দেয়া হয়েছে কাপড়িয়া নগর জামে মসজিদ। মঙ্গলবার দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে রোজাদাররা নামাজ ও ইফতার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মসজিদের সামনে অপরিচিত কাউকে দেখলেই জেরা করছেন।

জানা যায়, থানা ভবনের পাশে নতুন এই মসজিদে প্রথমবার নামাজ পড়ে মসজিদ উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য (জাতীয় পার্টি) কাজী ফিরোজ রশীদকে। কিন্তু জায়গাটি বিরোধপূর্ণ জানানো হলে ফিরোজ রশিদ আসেননি। মসজিদের চার সীমানায় বুক সমান দেয়াল তোলা হয়ে গেছে। মেঝের স্থানে বালু। এর উপর কার্পেট ও সাদা কাপড় বিছানো। বাঁশের সহায়তায় ছাউনি দেয়া হয়েছে নতুন টিন দিয়ে।

এলাকার স্থায়ী মুসলিম কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, হিন্দু মালিকানা অর্পিত সম্পত্তি দখলে নেয়ায় পুরাতন কৌশল হিসেবে মসজিদ বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুর্তজা- শরীফ-শিপন গং। মুর্তজা-শরীফ-শিপন গং বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতি করলেও সুবিধা হাসিলের জন্য বর্তমানে সরকারি দলে ভিড়েছে শুধুমাত্র ফায়দা হাসিলের জন্য। তারা নিজেদের বঙ্গবন্ধু শিশু একামেডির সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। মুর্তজা-শরীফ-শিপন গং-দের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু মুসলমান এখানে মসজিদ নির্মাণ করছেন।

অন্যদিকে স্থানীয় হিন্দুরা দাবি করেছেন, জমিটি একজন হিন্দু ব্যক্তির অর্পিত সম্পত্তি। এখানে একটি মন্দির ছিল। এ বিষয়ে গত শুক্রবার গেন্ডারিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গেন্ডারিয়া থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কুমার রায়। জিডিতে বিবাদী করা হয় শরীফ উরফে কালা শরীফ, মর্তুজা ও শিপন গং।

নথিপত্র খুঁজে জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে কালী চরণ সাহা রোড এলাকার ৩১ নং হোল্ডিং এর ৩৮৪ অযুতাংশ জায়গার মালিক ছিলেন রাধারানী দাইস্যা। স্বাধীনতার পর এটি অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ওই জমি তিনটি গ্রুপ লিজ নেয়। একটি গ্রুপে রয়েছে মো. সিরাজ মিয়া, মো. জাকির. মো. হারুন অর রশিদ ও মো. আশরাফ উদ্দিন। এই গ্রুপের লিজ ২০১২ সালের পর নবায়ন করা হয়নি। দ্বিতীয় যে গ্রুপটি লিজ নেয় তা হলো মিলব্যারাক সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি। ২০১১ সালের পর এই গ্রুপটিও জমির লিজ নতুন করে নবায়ন করেনি। তৃতীয় গ্রুপটি হলো বেগম হাসিনা বেগম। স্বামী, মো. ভোলা মিয়া। তিনিও ২০১৪ সালের পর জমির লিজ নতুন করে নবায়ন করেননি। মন্দিরের পাশের ওই জমিতে তুরান নামের এক ব্যাক্তি ‘মিলিব্যারাক সমাজ কল্যাণ সংগঠন’ নামের একটি সামাজিক গঠনমূলক সংগঠন গড়ে তুলেন। বর্তমানে সংগঠনের সভাপতি মো. মর্তুজা

রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ওয়ারী জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে যায়। জায়গাটি নিয়ে আইনি ঝামেলা থাকায় মসজিদে উপস্থিত মুসলি্ল ও মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের মসজিদ নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে মুসলমানদের বাকবিত-া ও মিল ব্যারাক সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরীফকে আটক করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সেখানে তুমুল উত্তেজনাকর অবস্থা তৈরি হয়। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়, হিন্দুরা পুলিশ দিয়ে মসজিদ ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। পুলিশ অস্ত্র ঠেকিয়ে মসজিদ থেকে মুসলি্লদের বের করে দিয়েছে। এলাকাবাসী এসে যেন মসজিদে অবস্থান নেয়। যেকোন মূল্যে এই জায়গা হিন্দুদের দখলে যেতে দেয়া হবে না। ঘটনার পর থানার পক্ষ থেকে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে একটি নোটিশ মসজিদের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রোববার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে রথযাত্রার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে অর্পিত সম্পত্তিতে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় এবং মন্দিরের পাশে মসজিদ নির্মাণ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা যাবে না। প্রয়োজনে জমির লিজ বাতিল করা হবে। পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।

মর্তুজা জানান, জায়গাটি তাদের সংগঠনসহ ছয়জন মুসলমান ব্যক্তির মালিকানাধীন ছিল। এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে মসজিদ নির্মাণের কথা বলে, নামমাত্র মূল্য দিয়ে জায়গার দখল নেয়া হয়। তাদের জায়গায় তারা মসজিদ নির্মাণ করবে, তাতে হিন্দুদের সমস্যা কী?

গেন্ডারিয়া থানার ওসি (অপারেশন) হেলাল উদ্দিন সংবাদ’কে বলেন, ঘটনাটি পুলিশ খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে। চেষ্টা করা হচ্ছে- হিন্দু-মুসলমান উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির। হিন্দু-মুসলমানে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সংঘাত তৈরির জন্য এখানে কেউ কেউ যুক্ত আছে। তাদের অবশ্যই দমন করা হবে। মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট যাতে না হয় সে বিষয়টি আমরা দেখছি।

এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ জুন সোমবার সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। সকাল ১১টায় শাঁখারিবাজারে মানববন্ধন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

সূত্র-দৈনিক সংবাদ