ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১২:৪৮:০৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

কোটা সম্পূর্ণ বাতিল, হাইকোর্ট বিভাগে রিট এবং বাংলাদেশের সংবিধান- বিবেক চন্দ্র, এ্যডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট

| ২৯ চৈত্র ১৪২৪ | Thursday, April 12, 2018

Image may contain: Bibek Chandra

সারা দেশব্যাপী চলমান কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আজ সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এক ঐতিহাসিক ঘোষণা এল। এই ঘোষণার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাকুরিতে সম্পূর্ণ কোটা তুলে নেওয়ার কথা বলেন এবং এর পিছনের যৌক্তিকতাও তিনি তুলে ধরেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলেন তখন থেকেই আবার একটি গোষ্ঠী এর পিছনে সরকারের দূরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্র খোজা শুরু করল এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার শুরু করল যে, এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করা হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক তা তাৎক্ষণিক ভাবে স্থগিত হয়ে যাবে এবং কোটা পুনরায় কোর্টের নির্দেশে চালু হবে। লক্ষ্যনীয় ব্যপার হলো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনেক আইনের ছাত্র, শিক্ষক এমনকি এ্যডভোকেটও এই ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করে লেখা প্রকাশ করছেন এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন করে উন্মাদনা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মাঝে যে প্রশ্নগুলোর উদ্রেগ হচ্ছে তা হলঃ প্রথমত, বাস্তবিক অর্থে সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উপস্থাপন অর্থই কি তাৎক্ষণিক ভাবে কোটা ব্যবস্থা পরিবর্তন বা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া? আসলে সংবিধানে কোনো আইন পরিরর্তন, সংশোধন বা বিলুপ্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হয় যা সংবিধানেই বর্ণিত আছে। এর অর্থ যে সকল আইন দ্বারা কোটা ব্যবস্থা বর্তমানে বলবৎ আছে সংসদে সেসকল আইনের সংশোধনী প্রস্তাব আনয়নের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন পূর্বক কোটা সংক্রান্ত বিধানগুলো সংশোধন বা বিলুপ্তি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সংসদের প্রনীত কোন আইনের বিরুদ্ধে কি রিট মামলা বলবৎযোগ্য? এর উত্তরে সংবিধানের ৭ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷” এক্ষেত্রে কোটা সংক্রান্ত আইন যদি সংশোধন বা বিলুপ্ত করা হয় তবে সেক্ষেত্রে কি তা সংবিধানের পরিপন্থি হবে? এই প্রশ্নের উত্তরের পূর্বে
আমরা যদি সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণি ত বিধান পর্যবেক্ষণ করি তাহলে সেখানে যা হয়েছে তা হল- “এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই-
(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সমপ্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সমপ্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।”
এই বিধানটিতে উপোরক্ত শ্রেণীসমূহের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়নের ব্যাপারে রাষ্ট্রকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যা রাষ্ট্র চাইলে তাদের জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে, তবে যদি রাষ্ট্র যদি কোনো বিশেষ বিধান প্রণয়ন না করে তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে তা প্রণয়নের জন্য কোন বাধ্যকরী নির্দেশ এই অনুচ্ছেদে দেওয়া হয়নি। অতএব বলা যায়, রাষ্ট্র বা সংসদ যদি কোটা সংক্রান্ত বিধান সংশোধন বা বিলুপ্তি করে তবে তা সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হবে না। আর এই বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যেহেতু সংসদের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা তাই এক্ষেত্রে সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদও প্রযোজ্য হবে না যেখানে বলা হয়েছে-
“২৬। (১) এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।

(২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।”
কারণ ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণি ত বিশেষ বিধান এর ক্ষমতা রাষ্ট্রের উপর বাধ্যকর নয়, বরংচ তা রাষ্ট্রের ইচ্ছাধীন করা হয়েছে, অর্থাৎ রাষ্ট্র চাইলে এ সংক্রান্ত বিধান প্রণয়ন করতে পারে আবার তা বাতিলও করতে পারে। আর রাষ্ট্র যদি তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে কোন আইন প্রণয়ন করে আবার পরবর্তীতে তা বাতিল করে তবে তা সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণি ত মৌলিক অধিকার সমূহের সহিত অসমঞ্জস্য হবে না। তাই এ সংক্রন্ত রিট হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা হলেও তার বলবৎযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।

তৃতীয়ত, আদালতের আদেশ কি সংসদের উপর বাধ্যকর এবং আদালত কি সংসদকে আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের আদেশ দিতে পারে? উত্তর হলো- বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হল সংবিধান এবং এ সংবিধান অনুসারে তিনটি বিভাগ নিয়ে সরকার গঠিত তা হলঃ (ক) আইন বিভাগ, (খ) শাসন বিভাগ এবং (গ) বিচার বিভাগ এবং এই প্রত্যেকটি বিভাগই স্বাধীন ভাবে কাজ করে। তাই বিচার বিভাগ বা আদালতের কোন আদেশ আইন বিভাগ বা সংসদের উপর বাধ্যকর নয় এবং আদালত সংসদকে কখনই কোনো আইন প্রণয়ন করতে বা সংশোধন করতে নির্দেশ দিতে পারে না শুধুমাত্র সংসদের প্রণীত আইন যদি সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয় তবে শুধুমাত্র সে অংশটুকু বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে।

চতুর্থত, কোটা বাতিল সংক্রান্ত আইন পাশ হলে তার বিরুদ্ধে কি রিট মামলা চলবে? রীট মামলা দায়ের করতে হলে প্রথমেই যে দুটি জিনিস দেখতে হবে তা হলো মামলার (ক) লুকাস স্টান্ডি আছে কিনা আর (খ) কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ কিনা? প্রশ্ন হলো, লুকাস স্টান্ডি কি? লুকাস স্টান্ডি হল আদালতের সামনে মামলা দায়েরের কারণ। এখন কি কি কারণে রিট মামলা দায়ের করা যায়! সংবিধানের ৪৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সমূহ ভঙ্গ করা হলে সেক্ষেত্রে সংবিধানের ১০২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রীট দায়ের করা যায়। যেহেতু কোটা সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের ইচ্ছাধীন সেহেতু এটি তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের আওতায় আসে না। এক্ষেত্রে রীট মামলা দায়েরের লুকাস সান্ডিও তৈরী হয় না। আর যেহেতু এক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে কেউ নিজেকে সংক্ষুব্ধ মনে করে রীট দায়ের করলেও তা আদালতে চলবে কিনা তা নিয়ে আদালতের সামনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন দেখা দিবে।

উপোরক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে আশা রাখি সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে যে বির্তক তৈরীর মাধ্যমে সামগ্রিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চলছে তার অবসান হবে।