ঢাকা, মে ৪, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২০:৫১:৫২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

কাল জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু

| ১০ আষাঢ় ১৪২৪ | Saturday, June 24, 2017

Image result for কাল জগন্নাথদেবের রথযাত্রা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব আগামীকাল শুরু হচ্ছে। আগামী ৩ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব সমাপ্তি হবে।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং মন্দির নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে নয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে মানিকগঞ্জের ধামরাইয়ে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগত হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছে জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথযাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

সকালে বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হবে রথযাত্রার অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানমালার মধ্য রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

ঢাকার স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) আশ্রমে বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ উপলক্ষে দুপুরে স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি থাকবেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের সেবায়েত যশোদা নন্দ। আলোচনা সভা শেষে মঙ্গল প্রদীপ জ্বলিয়ে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

পরে এখান থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রা টিকাটুলি, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে।

রথযাত্রা উপলক্ষে রাজধানীর জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দিরেও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে এ মন্দিরে রথযাত্রা শুরু হবে। পুরনো ঢাকার শাঁখারীবাজার কমিটি আয়োজিত রথযাত্রাটি শাঁখারীবাজার থেকে শুরু হয়ে মধাব গৌড়ীয় মঠে গিয়ে শেষ হবে। জগন্নাথ জিউ মন্দিরের রথযাত্রা তাঁতীবাজার থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করবে।

এ ছাড়া রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ রথযাত্রা অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে ওই সময় বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। রথযাত্রা চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবার সহযোগিতাও কামনা করেছে ডিএমপি।

রথযাত্রার অনুসন্ধানেহিন্দু ধর্মের এক প্রাচীন ঐতিহ্য। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী জগতের নাথ এদিন আপন ভাইবোন সহযোগে মাসির বাড়ি যাত্রা করেন। বিশেষ বিশেষ রথে তাঁদের যাত্রা সম্পন্ন হয়। অগনিত ভক্ত তাদের ঈশ্বরের প্রতি অপার বিশ্বাসে টান দেন রথের রশিতে। হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তির কামনায় হোমযজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। এর পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার পালিত হয়। গজপতি রাজা নিজের রাজাবেশ পরিত্যাগ করে মেথরের বেশ ধারন করে রথের পথ পরিষ্কার করেন। জগতের নাথের জন্য পথ তৈরি করে দেন ইহ জাগতিক নরপতি। তিনি সোনার বাঁট লাগানো ঝাড়ু দিয়ে চন্দনজল ছিটিয়ে পূর্ণ ভক্তি সহকারে পথ তৈরি করে দেন। এই অবশ্যপালনীয় আচারটি আমাদের বুঝিয়ে দেয় ঈশ্বরের একচ্ছত্র রাজ্যে কোনও প্রভাবশালী প্রভু বা খুব সাধারণ একজন ব্যক্তির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ভগবানের কাছে ভক্তের অবিরাম ভক্তিরই প্রাধান্য। সোজা এবং উল্টো রথ… এ দুদিনই এই রসমটি পালিত হয়।  পুরীর রথযাত্রা সম্পর্কে বলা হয় যে, সারা বছর শ্রী শ্রী  জগন্নাথদেব, শ্রী শ্রী বলভদ্রদেব ও তাঁদের বোন সুভদ্রা মন্দিরের মধ্যে অধিষ্ঠান করেন। অগণিত ভক্তের পক্ষে তাঁদের দর্শন সম্ভব না হওয়ার কারণে এই বিশেষ সময়ে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। যাতে প্রতিটি মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণ করতে পারেন। মোক্ষ লাভ করতে পারেন। আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়ায় শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব তাঁর নান্দীঘোষে চড়ে যাত্রা করেন মাসির বাড়ি অভিমুখে। ষোলোটি চাকা বিশিষ্ট এই রথ আবৃত থাকে লাল এবং পীত কাপড়ে। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ পীত পরিধান পছন্দ করতেন বলেই তাঁর রথের আবরনও পীতরঙা। রথের শীর্ষে তালপাতার ধ্বজাধারী শ্রী শ্রী বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ। এই রথটি চোদ্দটি চাকা বিশিষ্ট এবং রথের রঙ সবুজ ও লাল। বোন সুভদ্রার রথের রঙ লাল এবং কালো। বারোটি চাকা বিশিষ্ট এই রথের নাম দেবদলনা। সুভদ্রার রথে তাঁর সঙ্গে যাত্রা করেন সুদর্শন চক্র। মদনমোহন থাকেন জগন্নাথদেবের সঙ্গে তাঁর রথে। বলভদ্রের সাথে থাকেন রাম এবং কৃষ্ণ। তিন কিমি পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা মাসির বাড়ি যান ন’য় দিনের জন্য।