ঢাকা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৭:১৬:২৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

কানুনগোর ১৫৯৭ পদের ১১০৭টিই শূন্য

| ৬ পৌষ ১৪২৩ | Tuesday, December 20, 2016

কানুনগোর ১৫৯৭ পদের ১১০৭টিই শূন্য

কানুনগোর এক হাজার ৫৯৭টি পদের মধ্যে এক হাজার ১০৭টিই বর্তমানে খালি। অভিযোগ রয়েছে, নানা টালবাহানা করে দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে না।

নিয়ম মতে সার্ভেয়াররা পদোন্নতি পেয়ে কানুনগো হওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁদের পদোন্নতি আটকানোর জন্য একটার পর একটা মামলা হয়েছে। মামলা শেষ হলেও চিঠি চালাচালি আর অনুসন্ধানের নামে ফাইল আটকে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ পদোন্নতির ফাইলটি পিএসসি হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।চাকরির নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, পদ খালি থাকলে ১০ বছরের জ্যেষ্ঠ সার্ভেয়ারদের কানুনগো হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া যাবে। অথচ ২৫ থেকে ৩০ বছর চাকরি করার পরও তাঁরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। অনেকেই একই পদে থেকে চাকরি শেষ করেছেন। কেউ কেউ পদোন্নতির আফসোস নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।

মোহাম্মদপুর এসি ল্যান্ড অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার এম আর নূরুল করিম বলেন, ‘একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে শুধু নামের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি যুক্ত করতে পেরেছি। চাকরিজীবনে একটি মাত্র পদোন্নতির জন্য বছরের পর বছর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আমলাদের কূটচালের জন্য পদোন্নতির ফাইলটি এ দপ্তর থেকে শুধু সে দপ্তরে দৌড়াচ্ছে। হয়তো এক পদে চাকরি করেই অন্যদের মতো কর্মজীবন শেষ করতে হবে। ’

একাধিক সিনিয়র সার্ভেয়ার জানান, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়োগবিধিতে সেটা স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। ২০১১ সালে প্রণীত নন-ক্যাডার ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ একটি খসড়া জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবহিত করে বিজ্ঞপ্তি আকারে তা প্রকাশ করবে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতার তালিকা ব্যতীত কোনোরূপ পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। অথচ এ বিধিমালা অনুসরণ না করে সার্ভেয়ারদের পদোন্নতি নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমায় লিপ্ত রয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত-অনুসন্ধানের নামে চলছে কালক্ষেপণ। ফলে তাঁদের বিনা পদোন্নতিতেই অপেক্ষা করতে হয়েছে এমনকি অবসরে চলে যেতে হচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে কানুনগোর মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা এক হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে এক হাজার ১০৭টি পদই শূন্য। ফলে মাঠপর্যায়ের ভূমি প্রশাসনের ভিত্তি ভেঙে পড়েছে। কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ফলে সরাসরি ৫০ শতাংশ এবং পদোন্নতির মাধ্যমে ৫০ শতাংশ সার্ভেয়ারকে কানুনগো হিসেবে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ৬ এপ্রিল ২৩৫ জন সার্ভেয়ারকে কানুনগো হিসেবে পদোন্নতি দেয়। কিন্তু ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সাতজন সার্ভেয়ার ও একজন ড্রাফটম্যান-কাম-এরিয়া-এস্টিমেটর কাম-সিটকিপার আদালতে মামলা দায়ের করলে সেই উদ্যোগ হোঁচট খায়। সার্ভেয়ার ফারুক হোসেন, রফিকুল ইসলাম, খান তোফাজ্জল হোসেন, রফিকুল আলম, হাবিবুর রহমান, মান্নান খান, মো. শাহজাহান ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মামলায় উল্লেখ করেন, পদোন্নতি দেওয়া ২৩৫ জনের চেয়েও তাঁরা জ্যেষ্ঠ সার্ভেয়ার। অথচ অন্যায়ভাবে তাঁদের বাদ দিয়ে চাকরিতে অপেক্ষাকৃত কম বয়েসীদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যার কারণে তাঁরা সংক্ষুব্ধ হয়ে এর প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে তাঁদের পক্ষে আদালত রায় দিলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো পদোন্নতি হয়নি। এরপর বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি রিট পিটিশন হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় ২৫০ জন পদোন্নতিপ্রত্যাশী সার্ভেয়ার আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। প্রতিটি পিটিশনেই সরকারপক্ষ হেরে যায়। কিন্তু এসব রায় না মানার কারণে তাঁদের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫-১৬টি আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। সে মামলাগুলোতেও সার্ভেয়ারদের পক্ষে রায় হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্ভেয়ার বলেন, ‘এসব মামলা, রিট কিংবা আদালত অবমাননার মামলা মোকাবিলা করতে করতে এখন আমরা অসহায়। ’

সূত্র মতে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য হওয়ার পর হাইকোর্ট কয়েকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তলব করেন। কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হয়ে জানান, কানুনগো পদটি এরই মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। তাই সার্ভেয়ারদের কানুনগো হিসেবে পদোন্নতি দিতে হলে পিএসসির (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) অনুমোদন লাগবে। এরপর জ্যেষ্ঠতার তালিকা করে ফাইলটি পিএসসিতে পাঠানো হয়। তারা দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাই ও সন্ধান-অনুসন্ধান করে গত মাসের ১৭ তারিখ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কানুনগোর শূন্য পদ পূরণের জন্য সুপারিশ করে। এর পরও কিছু বিষয়ে ব্য্যাখ্যা চাওয়া হলে পিএসসি এরও জবাব দিয়ে দেয়। কিন্তু এতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। পিএসসির কাছে আবারও নতুন করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে সার্ভেয়াররা অভিযোগ করেন।

একাধিক এসি ল্যান্ড জানান, নানা অজুহাতে সার্ভেয়ারদের পদোন্নতি ফাইল এক যুগ ধরে শুধু দৌড়াচ্ছে। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পিএসসি, হাইকোর্ট, জজকোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। অথচ মাঠপর্যায়ে ভূমি প্রশাসন কানুনগোশূন্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে ভূমি প্রশাসনে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এত অধিকসংখ্যক পদ খালি রেখে কোনোভাবেই প্রশাসন ঠিকমতো পরিচালনা করা যায় না। তাই বিষয়টিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যাটি জিইয়ে আছে। এত অধিক পরিমাণ কানুনগো পদ খালি থাকার বিষয়টি নজিরবিহীন। আসলে একটার পর একটা মামলা-মোকদ্দমা, ফাইল চালাচালি এবং পিএসসির মতামতসহ নানা জটিলতা ছিল। বর্তমানে সব কিছু নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এর পরও কেন পদোন্নতির বিষয়টি আটকে আছে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে বিষয়টি আমি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। ’