ঢাকা, মে ৮, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:২০:১০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

ঈদে জমে উঠেছে টাঙ্গাইল শাড়ির বাজার “টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই”

| ১৬ আষাঢ় ১৪২২ | Tuesday, June 30, 2015

111.jpg

অলক কুমার দাস, টাঙ্গাইল-সামনে ঈদে। জমে উঠেছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শাড়ির বাজার। সময়ের সাথে সাথে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র আর নতুনত্ব। বেড়েছে টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির কদর ও ব্যবহার। এবার ঈদেও বাহারি নতুন ডিজাইন আর নতুনত্ব নিয়ে বাজারে এসেছে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি। ঈদকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের সাথে সাথে বিশ্বের সব মহিলাদের মন জয় করতে এসব শাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশের বাজারে।
ন কাটাচ্ছে তাঁত শ্রমিকরা। তারা নিঁপুণ ভাবে তৈরী করছে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ী। আর তাদের তৈরী শাড়ী দেশের সীমানা পেড়িয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। মন জয় করে নিচ্ছে দেশ বিদেশের হাজার হাজার রমণীর। এল. সি’র মাধ্যেমে ভারতের মার্কেটেও যাচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। জেলার প্রায় ৮০ হাজার তাঁতে ৫ লাখের অধিক তাঁত শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করছে ঈদ মার্কেটের শাড়ীর চাহিদা মেটাতে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম ক
টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লী হিসেবে খ্যাত দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের পুরো গ্রাম মুখরিত হয়ে উঠেছে তাঁতের খট খট শব্দে। ভোর থেকে রাত অবধি কর্মব্যস্ত দিরতে হচ্ছে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেও তারা অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। এর ফলে হস্ত চালিত তাঁতের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

7.jpg

টাঙ্গাইল শাড়ীর রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাথরাইল, চন্ডি, বেলতা ও পুটিয়াজানি, বাজিতপুর এবং কালিহাতি উপজেলার বল্লা, রামপুর, সিঙ্গাইর, বেহালাবাড়ী, মোমিননগর, দড়িখষিলা, কাজীবাড়ীর তাঁত প্রধান এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে তাঁত শ্রমিকরা প্রচন্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাঁত শ্রমিকরা কেউ চরকায় সূতা কাটছে, কেউ সূতা টানা দিচ্ছে, কেউ কেউ শানায় সুতা ভরছে, কেউ বও ভরছে, কেউ মাকু টেনে শাড়ী বুনাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাঁত পল্লীগুলোতে রাত-দিন কাজ চলছে। বাড়ীর আবাল-বৃদ্ধবনিতা দিন রাত কাজ করার পরেও চাহিদা অনুযায়ী শাড়ী সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁতীদের। বাড়ীর সবচেয়ে ছোট সদস্যটিও নলিতে সুতা ভরে কাজে সহযোগিতা করে।

আগে টাঙ্গাইলের তাঁতে শুধু সাধারণ মানের শাড়ী তৈরি হতো। কিন্তু সময়ের আবর্তে শুধু সাধারণ মানের নয় বাহারী ডিজাইনের শাড়ী তৈরি হচ্ছে টাঙ্গাইলে। ঈদের মার্কেটে এবার সফ্ট সিল্ক, জামদানী, সূতি, ধান সিঁড়ি, আনারকলি, গ্যাস সিল্ক, একতারি, দোতারি ও রেশম শাড়ীর চাহিদা বেশি। থরে থরে সাজানো এই শাড়ী দুই শত পঞ্চাশ টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন টাঙ্গাইল শাড়ী নিন্মবিত্তের সীমানা ডিঙ্গিয়ে উচ্চবিত্ত এবং ফ্যাশন সচেতন নারীদের মন জয় করেছে। দেশের পাশাপাশি ভারতসহ অন্যান্য দেশেও দ্রুত টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টাঙ্গাইল শাড়ীর ডিজাইনে বৈচিত্র থাকার কারণে ভারতে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান ভারত থেকে আসা ব্যবসায়ী অপর্ণা বসাক।
ঢাকা থেকে শাড়ী কিনতে আসা এক গৃহিনী জানালেন, তাঁত শাড়ী আমার সব সময়ই পছন্দের। আমি অন্যান্য শাড়ীর চাইতে টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ী পরিধান করে বেশী আরাম পাই। ঈদ মার্কেটের ভীড় এড়িয়ে নিরিবিলিতে স্বাচ্ছন্দে নিজের জন্য এবং প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য পছন্দের শাড়ি কিনতে এখানে এসেছি। তিনি আরো বলেন, বড় বড় বিপনী বিতান, মার্কেট ও শোরুমের চেয়ে অনেক কম দামে বাহারী ডিজাইনের শাড়ি এখানে পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ঈদের শাড়ী কিনতে এখানে চলে আসি। তবে অনান্য বছরের থেকে এবার শাড়ীর দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষিকা তাঁত শাড়ী কিনতে এসে বলেন, টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁতের শাড়ীর এই উন্নত বাহারী ডিজাইন ও নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রে তথা তাঁত শাড়ির এই উন্নতির মূলে টাঙ্গাইলের তাঁতী সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আরও বলেন, যদি সরকার এই শিল্পে তাঁতীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, রং ও সুতা সহ সকল তাঁত উপকরনের উপর ভর্তূকী প্রদান করে, তবে এই শিল্পের মাধ্যমে অনেক বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

তাঁত পল্লী পাথরাইলের শাড়ী ব্যবসায়ী ও শাড়ী ডিজাইনার নীল কমল বসাক বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে আমরা বাহারী ডিজাইনের শাড়ী এনেছি। ক্রেতার চাহিদা আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজাইনে অনেক নতুনত্বও এসেছে। সারা বাংলাদেশে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ীর যে সুনাম রয়েছে আমরা সেই সুনাম ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর। টাঙ্গাইল যগেশ্বর তাঁত শাড়ীর স্বত্বাধিকারী এবং তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের নিয়মিত ক্রেতারা আসছে। এবার শাড়ীর মূল্য প্রতিবছরের তুলনায় স্বাভাবিক। আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আয়ের কথা চিন্তা করে যতটা সম্ভব মূল্য কম রাখার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা শ্রম ঘাম ঝরিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছি। গত বছর দুই লাখ পিচ শাড়ী ভারতে বিক্রি হলেও এবার আশা করি ৬ লাখ পিচেরও বেশী শাড়ি বিদেশে রপ্তানী হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের বাজারে অতীতের মতই টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি তার নিজস্ব স্বকীয়তায় ক্রেতাদের মন জয় করবে - এমনটাই আশা করছি।