ঢাকা: আগামীকাল রোববার দেশব্যাপী ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস ২০১৭’ পালন করা হবে। দিবসটি পালনের লক্ষ্যে সরকার প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ৭০ এর নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকার এবার ‘নিরাপদ প্রসব চাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চল যাই’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
আজ দুপুরে মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি এ কথা জানান। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ম্যাটারনাল, নিওনেটাল, চাইল্ড এ্যান্ড এডোলোসেন্ট হেলথ (এমএনসিএ্যান্ডএএইচ) এর লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো: জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. পবিত্র কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিদিন ১৪ জন মা প্রসবজনিত কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে মৃত্যুবরণ করছেন। এ হিসেবে প্রতি লাখে দেশে এখন ১৭০ জন মা মৃত্যুবরণ করছেন। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এ মৃত্যুহার আরো বেশি ছিল।
তিনি বলেন, তাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীর সহযোগিতায় সন্তান প্রসবের হার বাড়িয়ে বর্তমানে ৪২ শতাংশে নিয়ে আসা হলেও এখনও ৫৮ শতাংশ প্রসব অদক্ষ হাতে বাড়িতে হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে নানাবিধ কর্মসূচী ও কৌশল গ্রহণ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, ১৫৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি সেবা প্রদানের পাশাপাশি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সীমিতভাবে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ২ হাজার ২শ’ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিরাপদ প্রসব সেবা জোরদার করা হয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার প্রসূতি সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের প্রসূতি সেবা প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। হতদরিদ্র মা’দের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করতে ৪১টি জেলার ৫৩টি উপজেলায় মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীম চালু করেছে। প্রতিবছর ১০টি করে উপজেলায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ২০২২ সাল নাগাদ ১০৩টি উপজেলাকে এ ভাউচার স্কীম কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নে জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও প্রসবকালীন মৃত্যু রোধে ‘পেমেন্ট ফর ওর্য়াক’ এর ভিত্তিতে ৬৫ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে গিয়ে গর্ভবতী মা’দের স্বাস্থ্যসেবা ও গর্ভকালীন পরামর্শ প্রদান করবে। এ নিয়োগ সম্পন্ন হলে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু অনেক কমে আসবে বলেও তিনি জানান।
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের কর্মসূচী প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, সরকার দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে দিবসটির প্রতিপাদ্য প্রচার করবে, দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে আলোচনা সভার আয়োজন করবে এবং অবস্ ও গাইনোকোলজিকাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) তাদের ১৩টি শাখার মাধ্যমে আলোচনা সভা ও সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এছাড়া জেলা, উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি উদযাপনের জন্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে বলেও তিনি জানান।