তথ্যসূত্র-ঢাকাটাইমস
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখলের যেসব অভিযোগ এনেছেন তাকে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাস।
আজ রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
গত ৬ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। এসময় তিনি পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে স্বরূপকাঠিতে হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ করেন।
পরে এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে এই সংগঠনেরই পিরোজপুর জেলা ও স্বরূপকাঠির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।এই তথ্যকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।একইদিনে পিরোজপুর ও স্বরূপকাঠিতে এই প্রতিবাদে সব শ্রেণী পেশার মানুষ মানববন্ধন করেন।
পরবর্তী সময়ে রানা দাশগুপ্ত একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, “পিরোজপুরের ঘটনায় স্কুল শিক্ষক ও হিন্দু নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে। পিরোজপুর নিবাসী জগন্নাথ হলের ছাত্রদেরও সাংসদের পক্ষে মানববন্ধনে যোগ দিতে বলা হয়েছে।”
সাক্ষাৎকারে দেয়া তার এই বক্তব্য এবং সাংসদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগের প্রতিবাদ জানাতেই আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, পিরোজপুর-স্বরূপকাঠি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, স্বরূপকাঠি হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং স্বরূপকাঠি শিক্ষক সমিতি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কানাই লাল বিশ্বাস বলেন, “রানা দাশগুপ্তের বক্তব্য তা অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ পিরোজপুর তথা স্বরূপকাঠিসহ জেলাব্যাপী সব হিন্দু নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, শিক্ষক সমাজ তথা সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধনে যোগ দেন। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা জানাই এবং এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাই। কারণ ওই কর্মসূচিটি ছিল স্বতস্ফূর্ত।”
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, “পিরোজপুর-১ আসনের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা একেএমএ আউয়াল যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পরাস্ত করে ওই আসনটি উদ্ধার করেন এবং কলঙ্কমুক্ত করেন। আমরা মনে করি তার এহেন বক্তব্য মৌলবাদী গোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।”
তিনি রানা দাশগুপ্তকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “২০০১ সালে নির্বাচনের পর পিরোজপুরসহ সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও বর্তমান সংসদ সদস্য তখন জীবনবাজি রেখে আমাদের পাশে থেকে রক্ষা করেছেন। তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাকে আক্রমণ করে এই ধরনের বক্তব্য আমাদের মর্মাহত করেছে এবং কেন তিনি এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা বোধগম্য নয়।”
ভবিষ্যতে এই ধরনের অসত্য ও তথ্যবিবর্জিত বক্তব্য না দিতে রানা দাশগুপ্তের প্রতি সংবাদ সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বরূপকাঠি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আশিষ কুমার বড়াল বলেন, রানা দাশগুপ্ত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন এ ধরনের কোনো ঘটনা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ঘটেনি। এমন কিছু ঘটলে আমরা জানতাম। তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। তার সোর্স ভুল তথ্য দিয়েছে। যাচাই বাছাই করে তথ্য দেয়া উচিত ছিল। আমরা তাকে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনার সরেজমিনে গিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করুন।”
দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদে আসন দেয়ার যে দাবি রানা দাশগুপ্ত করেছেন এর নিন্দা জানিয়ে অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাস বলেন, “আজীবন অসাম্প্রদায়িক কথা বলে হঠাৎ করে তিনি কেন সাম্প্রদায়িক কথা বলছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। যেখানে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে সেখানে তার এই ধরনের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। তার এই বক্তব্য আমাদের মধ্যে আরও বিভাজন সৃষ্টি করবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাক্ষাৎকারে হঠাৎ করে তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে পিরোজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের ভয়ভীতি দেখানোর কথা বলছেন এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি আমাদের ওপর সামষ্টিগত আঘাত করেছেন।”
পিরোজপুর-১ এর সংসদ সদস্যকে নিয়ে রানা দাশগুপ্ত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন কানাই লাল বিশ্বাস।
একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্য দেয়ার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করা উচিত ছিল বলেও দাবি করেন এই আইনজীবী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমীর কুমার বাচ্চু, আরসি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ বাবু দিলীপ সন্যাসী, স্বরূপকাঠি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিধন চন্দ্র মৈত্র, সাধারণ সম্পাদক সনজীব কুমার হালদার, উপজেলা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্বপন কুমার দত্ত প্রমুখ।