তথ্য সূত্র-ঢাকাটাইমস-বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেছেন, ‘আগে যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সরকারের সময় আমরা (সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) ভাল আছি, শান্তিতেই আছি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তা তো আর ঘটছে না।’ রবিবার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি। নিজ কার্যালয়ে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা ঐক্য পরিষদের কারণে যদি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় তাহলে সেটার অবসান হওয়া উচিত।’
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
শনিবার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি মানববন্ধনে আপনারা বলেছেন, ‘আমরা ভাল নেই, শান্তিতে নেই।’
এই সরকারের সময় আমাদের অনেক অর্জন। কার কী মত আমি জানি না। তবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা ভাল আছি, শান্তিতেই আছি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তা তো আর ঘটছে না। কে একথা প্রচার করেছে? এই প্রচার ঠিক না।
বিএনপি-জামায়াতের সময় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা কেমন ছিল?
১৯৯১ থেকে পরবর্তী ৫ বছর এবং ২০০১ সালের পরবর্তী ৫ বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চলতো। মাসে ৬০ টি থেকে ৪০টির মতো নির্যাতনের খবর আমাদের কাছে আসতো। ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এটা অনেকটা কমে আসে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি তো অসাম্প্রদায়িক ধারাকে সামনে রেখে পরিচালিত হয়। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতে সরকারের তো বেশ কিছু ভাল উদ্যোগ আছে…
হ্যাঁ। আওয়ামী লীগের আমলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছে। এছাড়া নিয়োগ-পদোন্নতিতেও সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখনও ৪ থেকে ৬ জন সচিব আছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। মন্ত্রিসভাতেও একাধিক প্রতিমন্ত্রী আছেন। যদিও আমরা পূর্ণমন্ত্রীর দাবি করছি। আমাদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতিও করা হয়েছে।
পূর্ণমন্ত্রী তো সরকারের গত মেয়াদে তিনজন ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রমেশ সেন, দিলীপ বড়ুয়া।
তা ছিল। তবে আমরা মনে করি, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে। এটা কোনো আলাদা ইস্যু নয়, চলমান একটা প্রক্রিয়া।
সম্প্রতি আপনারা একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফরিদপুরে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যের জমি জোর করে কিনে নেয়ার অভিযোগ এনেছেন…
ফরিদপুরের ঘটনাটি সেখানে গিয়ে আমাদের দেখা উচিত। প্রকৃত ঘটনাটা কী সেটা জানা উচিত।
তাহলে আপনারা অভিযোগের আগে-পরে ফরিদপুর যাননি?
ফরিদপুরে আমরা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যাইনি। স্থানীয় পর্যায় থেকে কেউ যে তথ্য পেয়েছি সেটি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে। তবে আমি মনে করি, প্রকৃত সত্যটা উৎঘাটন করতে হবে।
প্রকৃত ঘটনা না জেনে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে তাতে তো ওই ব্যক্তির সম্মানহানী ঘটে…
বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন জন অভিযোগ করে। আমাদের উচিত প্রকৃত ঘটনা ও সত্য উৎঘাটন করা। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কাউকে ঘায়েল করা, অসম্মানিত করা উদ্দেশ্য থাকা উচিত না।
আপনারা যদি অভিযোগের সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ হাতে নিয়ে কথা বলতেন তাহলে সেটা ভাল হতো কিনা?
হ্যাঁ, নীতিগতভাবে সেটাই করা উচিত। কোনো বিষয় সম্পর্কে বলার আগে প্রকৃত বিষয়টা জানা এবং দেখা উচিত।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কি কেউ কিনতে পারবে না, এটা কী দোষের?
তা কেন? কেউ বাড়ি বিক্রি করতে পারবে না, কিনতে পারবে না সেটা তো নয়।
প্রকৃত ঘটনা না জেনে অভিযোগ করায় এলজিআরডি মন্ত্রীর সম্মানহানী হয়েছে বলে অভিযোগ আছে…
কারো সম্মানহানী করা তো ঐক্য পরিষদের উদ্দেশ্য নয়। এলজিআরডি মন্ত্রী সরকারের সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে সম্মান করা উচিত।
অরুন গুহ মজুমদারের আইনজীবী সুবল চন্দ্র সাহা এক বিবৃতিতে বলেছেন জোর করে নয়, অরুন গুহ স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর কাছে জমিটি বিক্রি করেছেন।
যদি নিয়ম পদ্ধতি সবকিছু ঠিক রেখে অরুন গুহ মজুমদার জমি বিক্রি করেন এবং এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন কিনে থাকেন তাহলে তো কারো অভিযোগ করার কিছু নেই।
আমরা জেনেছি, অরুণ গুহ মজুমদার জমি বিক্রির টাকা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে গেছেন। ফরিদপুরে তার আরও জমি আছে। একজন লোক যদি দেশত্যাগ করেন তাহলে কি তিনি এসব রেখে যেতেন?
তা তো অবশ্যই না।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কারণে যদি সরকার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা ঐক্য পরিষদের কারণে যদি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় তাহলে সেটার অবসান হওয়া উচিত।
আপনারা যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন তখন তো সংবাদপত্রগুলোও সেইভাবে সংবাদ পরিবেশন করে। অথচ কেউ কিন্তু সঠিক ঘটনা অনুসন্ধান করছে না…
হ্যাঁ, এটা তো হয়।
যদি আপনাদের এসব বিরোধের কারণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কোনো সুযোগ নেই তাতে কি কোনো ক্ষতিই হবে না?
ক্ষতি তো হবেই। আমাদের জন্য এবং সবার জন্যই সেটা ক্ষতিকর হবে। ২০০১ সালের মতো অনেককে দেশ ছাড়তে হবে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং বিরোধিতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এতে তো সংগঠনের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়। এ থেকে আমরা শিক্ষা নেবো। ভবিষ্যতে যেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
গত ৬ আগস্ট আপনাদের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য আমলে নিয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করেছে। যে কমিটি ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের কাছে তার অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ থাকলে তা চেয়েছে। অথচ তিনি বলছেন তাকে হয়রানি করার জন্য এটা করা হয়েছে…
সরকারের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি করা ঠিক নয়। আইনজীবী হিসেবে তিনি হয়তো নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পারতেন।
কিন্তু কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর তা প্রমাণে অভিযোগকারীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
স্বাভাবিক নিয়মে আমরা যেটা বুঝি যে, অভিযোগকারীকে প্রয়োজনে প্রমাণ দিতে হবে। না থাকলে তাও বলা উচিত।
অনেকে বলছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির জন্যই সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুগুলো সামনে আনা হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?
যদি সরকার ও আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা হয়ে থাকে তাহলে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। এখন যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা কমিয়ে আনতে হবে।
প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার জন্য ফরিদপুরে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ কি আপনারা নিয়েছিলেন কিংবা যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?
না, এখন পর্যন্ত ফরিদপুর যাওয়ার কোনো উদ্যোগ আমাদের নেই।
এই পর্যায়ে এসে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
বিষয়টি যখন এসে গেছে, এখন তো এটা নিষ্পত্তি করতে হবে।
অরুণ গুহ মজুমদার কাজ শেষে ভারত থেকে দেশে আসবেন বলে শুনেছি। এব্যাপারে আপনারা কিছু জানেন?
আমিও শুনেছি তিনি বোধ হয় আসবেন।
http://www.dhakatimes24.com/2015/08/24/80160/%E2%80%9C%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A6%BF,-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E2%80%9D