ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ০৫:১৪:৩৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী ফোর্বসের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনা ৪৬তম বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র করছে : ওবায়দুল কাদের

‘উপরে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না’

| ১৭ ভাদ্র ১৪২১ | Monday, September 1, 2014

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এখনও পাকিস্তানি ইয়াহিয়ার পা চাটা কুকুররা সক্রিয় আছে। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে- যাতে তারা এ দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারে। গতকাল বিকালে রাজধানীর  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা স্মরণে এ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। সমাবেশের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ই আগস্ট ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, রাজনীতি দুই প্রকারের। একটি ভোগের আর অন্যটি ত্যাগের। দেশের মানুষকে ভালবেসে যে রাজনীতি সেটাই ত্যাগের রাজনীতি। আরও এক ধরনের রাজনীতি রয়েছে তা হলো ভোগের রাজনীতি। যে কোন দেশেই বিপ্লব হয়। এরপর সমাজে বিবর্তন আসে। সামরিক শাসকরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এলিট শ্রেণী তৈরি করে। তারা সৎ-অসৎ কোন কিছু বিচার করে না। যারা রাজনীতির নামে সম্পদের পিছনে ছোটে তারা রাজনীতিতে উপরে উঠতে পারে না। তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোগের নয়, ত্যাগের রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আমি আর কাউকে ভয় করি না।
জিয়াউর রহমানকে খুনিদের রাজত্ব কায়েমকারী আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু যখন কর্মসূচি দিলেন তখনই স্বাধীনতা বিরোধীরা তাকে হত্যা করে। তারপর খুনি মোশ্‌তাক ক্ষমতা দখল করে। এর কিছুদিন পর জিয়া ক্ষমতায় বসে। ভুট্টোর মাধ্যমে জিয়া লিবিয়ার গাদ্দাফিকে অনুরোধ করেছিলেন খুনিদের পুনর্বাসন করার জন্য। তাদের দূতাবাসে চাকরি দেন। বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী এসব ব্যবস্থা করেন। শুধু তা-ই নয়, ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করার পথ বন্ধ করেছিলেন। যারা নাগরিকত্ব ছেড়ে পাকিস্তান পাড়ি জমিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে এনেছিলেন। মার্শাল ল’র মাধ্যমে তাদের দেশে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৭ খুনের এক আসামিকে হাজত থেকে জিয়ার নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে জিয়া দেশে খুনের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে ১৯টা ক্যু হয়। জিয়া ক্যু’র পর সেনাবহিনীর হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর আড়াই হাজার বছরের সেরা ভাষণগুলোর মধ্যে একটি। লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ে তা উঠে এসেছে। বইটি আমার কাছে আছে। সেই ঐতিহাসিক ভাষণ জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। বারবার আঘাত আসা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা ভাষণ থামাতে দেয়নি। তারা এ ভাষণের জন্য রক্ত দিয়েছে। এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করেছিলেন উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশীদকে দিয়ে এরশাদ রাজনৈতিক দল গঠন করিয়েছিলেন। মেজর হুদাকে সংসদে বসিয়েছিলেন। বেগম জিয়া ’৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে মেজর হুদাকে এমপি বানিয়েছিলেন। সমাবেশে তিনি আরও বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। রায় কার্যকর হচ্ছে। বাকি কাজও সম্পন্ন করবো। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধীরা তাণ্ডব চালিয়েছিল। বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়েছিল। মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। সবই করেছে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১/১১-এর পর নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। হত্যা মামলায় আসামি করেছে। ওয়ারেন্ট জারি করেছে। দেশে ফিরতে বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ফিরে এসেছি। আমার একটাই দাবি ছিল- নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মারতে চেয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের লালদিঘীতে এরশাদের আমলে গুলি করে মারতে চেয়েছিল। মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। উপরে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। বর্তমান সরকারের শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, কেন ৮২ ভাগ পাসের হার হবে? পাসের হার ৯৮ ভাগ হতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। তারা কেন ফেল করবে? তিনি বলেন, দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছি। গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছে দিয়েছি। আগামী ২০২১ সালে দেশকে এশিয়ার মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙ্গালী জাতির যত অর্জন তার বেশির ভাগই বঙ্গবন্ধু ও তার দলের হাত ধরেই এসেছে। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে বন্দি ছিলেন তখন বঙ্গমাতাই নেতাকর্মীদের প্রেরণা যোগাতেন। পর্দার আড়ালে থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। দেশের যা কিছু অর্জন তাতেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরাসরি বঙ্গমাতার সঙ্গেই যোগাযোগ করতো। সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার আগে ছাত্রলীগের বার্ষিক প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগে আগাছা পরগাছায় ভরে গেছে। এদের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা কার সঙ্গে সংলাপ করবো? ২১শে আগস্টের কুশীলবদের সঙ্গে? খুনিদের সঙ্গে? খুনিদের সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না। তারপরও আমরা গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ১৫ই আগস্ট জাতির পিতার মৃত্যুদিনে খালেদা জিয়া কেক কাটেন, উল্লাস করেন, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ছাত্রলীগের মারামারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশ শুরুর আগেই সামনে ও চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।  গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশস্থলে এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে ওই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পর থেকে সমাবেশে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানী থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর আগে সামনে বসাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রথমে বাকবিতন্ডা, চেয়ার  ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা হাতহাতিতে লিপ্ত হয়।  প্রায় ২০ মিনিট ধরে এ ঘটনা চলে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, যারা এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আমরা চিনি। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।