ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১১:০৪:২৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

‘আমাকে মারত, কেন নিরীহ মানুষগুলোর ওপর হামলা করল’

| ৪ মাঘ ১৪২৪ | Wednesday, January 17, 2018

‘ত্বকীকে মেরেছে আজমেরি ওসমান, শামীম ওসমান। এ শহরে অগণিত খুন করেছে তারা। আজ আমাকে খুন করত? করত। আমি বুঝলাম না কেন আমার কর্মীরা এভাবে আমাকে ব্যারিকেড দিল। আমি একাই যেতাম। উনি মারতে চাইলে আমাকে মারত। কেন নিরীহ মানুষগুলোর ওপর হামলা করল।’

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এভাবেই সাংবাদিকদের বললেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আজ মঙ্গলবার মেয়র আইভীকে প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু সমর্থকরা মানবদেয়াল তৈরি করে লাঠি ও ইটপাটকেলের আঘাত সহ্য করে মেয়রকে প্রাণে রক্ষা করেছে।এসব ঘটনার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন মেয়র আইভী।

বিকেল ৪টা থেকে হকার ও এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে মেয়রের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেল গেইট এলাকা থেকে চাষাঢ়া এলাকা পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইভীকে প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু সমর্থকরা মানবদেয়াল তৈরি করে লাঠি ও ইটপাটকেলের আঘাত সহ্য করে মেয়রকে প্রাণে রক্ষা করেন। আহত হন সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন।

ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে ঘটনার বিবরণ দেন মেয়র আইভী। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

মেয়র আইভী বলেন, ‘আমি ৪টার সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশন থেকে সাধারণ লোকদের নিয়ে বেরিয়ে আসছি, ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হেঁটে আমি চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসছি। ওইখানে এসে আমি দাঁড়িয়েছি মাত্র। এমন সময় বড় বড় ইটা নিয়ে ও পিস্তল উঁচিয়ে আক্রমণ। দেখেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহীদুল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান আহত, আরো অগণিত মানুষ আহত হয়েছে। সাংবাদিকরা আহত হয়েছে।’

‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানাতে…’

ঘটনার জন্য এমপি শামীম ওসমানকে দায়ী করে মেয়র আইভী বলেন, ‘বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, পিস্তল উঁচিয়ে উনি এ কাজটা করলেন। মেয়র হিসেবে কয়েকটা কথা বলতাম, যে ফুটপাতে মানুষ হাঁটবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুশাসন আছে একনেক মিটিংয়ে সে কথাগুলো আমি আপনাদের জানাতে এসেছিলাম। একনেক মিটিংয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হকারদের জন্য হকার্স মার্কেট হবে, ফুটপাতে মানুষ হাঁটবে। হলিডে মার্কেট করে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেটের জন্য টাকাও চেয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। আমরাও আজ চিঠি লিখেছি হকার মার্কেটের জন্য টাকা চেয়ে। বর্তমানে হকার্স মার্কেটটা যেখানে আছে, ২০০৭ সালে এটি আমরা করে দিয়েছি, চারটি প্রশাসন, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা এবং যৌথ বাহিনী। এ চার প্রশাসনের উদ্যোগে ওই মার্কেটটি হয়। ওইখানে ৬০০ হকারের ব্যবস্থা করি। নারায়ণগঞ্জ শহরে আর কোনো হকার ছিল না। এ ছাড়া বাকি ৪০০ এর ব্যবস্থা করা হয়। তার মানে এক হাজার হকার শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসছে।’

মেয়র আইভী বলেন, ‘ঢাকায় উচ্ছেদ হওয়ার পর গত দুই বছরে হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জে হকারের সংখ্যা বেড়ে যায়। ওই হকারদের পুনর্বাসনের চিন্তাও আমরা করছিলাম।’

‘ডিসি সাহেব প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মানেন না’

মেয়র আইভী বলেন, ‘আজ কিন্তু ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে। হঠাৎ করে কেন শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে বসে থেকে আক্রমণটা করল। আজমেরি ওসমান (শামীম ওসমানের প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে) আজ সকাল থেকে চার-পাঁচবার সারা শহরে টহল দিয়েছে। কোথায় ছিল প্রশাসন? আজ আপনাদের চোখের সামনে, প্রেসক্লাবে সবাই আপনারা দাঁড়িয়েছিলেন, ঝড়ের বেগে ইট-পাথর, ঢিল দেওয়া হলো, গুলি হলো। প্রশাসনের এত এত লোকজন কোথায়? ডিসি সাহেব প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মানেন না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্কুলার এসেছে  সিটি করপোরেশন যখন মিটিং ডাকবে, সে মিটিংয়ে ডিসি এবং এসপি উপস্থিত থাকবে। সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তখন আলোচনার ভিত্তিতে ডিসি, এসপিসহ সকল প্রশাসন সিটি করপোরেশনগুলোকে সাহায্য করবে। উনারা সিটি করপোরেশনের একটা মিটিংয়েও উপস্থিত হননি।’

মেয়র বলেন, ‘একটি পত্রিকায় দেখলাম উইসডমে গিয়ে রাতের বেলায় সংসদ সদস্যের গার্মেন্টসে গিয়ে ডিসি, এসপিরা মিটিং করেন। একটা গার্মেন্টসে গিয়ে সরকারের কর্মকর্তারা মিটিং করতে পারে, আর সরকারের নির্দেশ তারা মানবে না, সিটি করপোরেশনে যেতে তাদের লজ্জা লাগে, মানুষের কথা বলতে তাদের লজ্জা লাগে, নারায়ণগঞ্জের মানুষের অধিকারের জন্য লজ্জা লাগে, আর উইসডমে গিয়ে মিটিং করতে লজ্জা লাগে না? তাহলে কি তারা সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী? নাকি ওসমান পরিবারের প্রভুভক্ত কর্মী?’

মেয়র আইভী বলেন, ‘১৫ বছরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। শামীম ওসমান কীসের বলে, কার ইঙ্গিতে নারায়ণগঞ্জের মানুষের ওপর আক্রমণ করেছেন, আমার ওপর আক্রমণ করলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘উনি কোন আক্রোশে আক্রমণ করলেন, ২০১১ সালে (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীর কাছে এক লাখের বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান) ভরাডুবি হয়েছিল, এই জন্য? নাকি উনি ২০০৮ সালে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হননি এই জন্য?’

‘পিস্তল আর প্রশাসন দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিবে?’

এমপি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা উনারা দুবাই মালয়েশিয়া পাচার করছেন। সে টাকা দিয়ে হকারদের জন্য মার্কেট করে দিক। কেন নারায়ণগঞ্জের মানুষের হাঁটার অধিকার তিনি হরণ করবেন?’

মেয়র আইভী বলেন, ‘উনি কি জানেন না নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাঁকে একাধিকবার বিতাড়িত করেছে। পিস্তল আর প্রশাসন ব্যবহার করে আমাকে থামিয়ে দিবে? দল যখন ক্ষমতায় থাকে না, যে নেতা দল, শহর, কর্মীদের ছেড়ে চলে যায় উনি আবার কীসের নেতা? আজ সকল প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করেছেন। এই ডিসি এসপিকে প্রত্যাহার করা উচিত।’

মেয়র বলেন, ‘এই ডিসি এখানে বসে শুধু চাটুকারিতা করে। একটা কাজও করে না। কী সহযোগিতা উনি এ পর্যন্ত করেছেন?’

আইভী বলেন, ‘আজ সকালে ডিসি আমাকে ফোন করেছেন। আমি উনাকে বলেছি প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে আমি কয়েকটা কথা বলব।  প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন এবং আমরা কী করতে যাচ্ছি। গতকাল রাতে আমি যখন এসপিকে বললাম, একজন সাংসদ এভাবে অর্ডার দিল যে সমস্ত হকার ফুটপাতে বসবে, আপনি কী করতে চাচ্ছেন? উনি আমাকে বললেন, একজন দলীয় এমপির নির্দেশ আমি কী করব? বললাম, আমি কি দলের বাইরে কেউ? আপনি কি জনগণকে হাঁটতে দিবেন না। আমি তো হকার্স মার্কেট করে দিব। প্রয়োজনে আরো করে দিব।’

মেয়র বলেন, ‘আমি তো পিস্তল নিয়ে চলি না। আমার তো ক্যাডার বাহিনী নাই। তাহলে কেন আমার নিরীহ লোকদের এভাবে আহত করা হলো। শামীম ওসমানকে জবাব দিতে হবে জনতার আদালতে।’