‘দেশ স্বাধীন হলেও এখনো স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া হয়নি। আমরা ভালো নেই, শান্তিতে নেই’-বললেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত কমিটিতে তাঁকে হাজির হওয়ার নোটিশ জারির প্রতিবাদে এই মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। নোটিশটিকে হয়রানিমূলক বলে দাবি করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখন চলছে, দেশ যখন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের রানা দাশগুপ্তকে দেওয়া এ নোটিশ হয়রানিমূলক ও রহস্যজনক। এ নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। এ সময় তাঁরা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবিও জানান।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালো মনোভাব থাকলেও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আমাদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের যাতে আর দেশত্যাগ করতে না হয়, তারা যাতে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে স্বাধীন দেশের নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মানববন্ধনে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কোনো রায় বের করে নিয়ে আসার প্রবণতা সমাজে ভালো ফল দেয় না।’
সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বলেন, রানা দাশগুপ্তকে হয়রানিমূলকভাবে এ নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনি তাঁর হয়রানির কথা উল্লেখ করে বলেন, এ নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রানা দাশগুপ্তকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের প্রদত্ত নোটিশ প্রত্যাহার করার দাবি জানান বিভিন্ন সংগঠনের বক্তারা।
৭ আগস্ট প্রথম আলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের খবর ‘সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করছেন মন্ত্রী-সাংসদ-প্রশাসন’ শিরোনামে প্রকাশ করে। ওই সংবাদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করা হয়।
১৬ আগস্ট একই পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে রানা দাশগুপ্ত ওই বিষয়ের ওপর বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকাশিত সংবাদ এবং সাক্ষাৎকারের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। গঠিত তদন্ত কমিটি ২৩ আগস্ট রানা দাশগুপ্তকে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যের প্রমাণসহ উপস্থিত থাকতে একটি নোটিশ দিয়েছে।
মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক। বক্তব্য দেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার, আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সঞ্জীব দ্রং, শামসুল হুদা, কাজল দেবনাথ, রঞ্জন বাড়ৈ, রোজালিন কস্টা, অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার বসু প্রমুখ।
বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন: প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানান, রানা দাশগুপ্তকে ‘বেআইনি নোটিশ’ দেওয়ার প্রতিবাদে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধানের দাবিতে ফরিদপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও দিনাজপুর জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের অপসারণ এবং ওই নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়।
ফরিদপুরে মানববন্ধন হয় প্রেসক্লাবের সামনে। তবে কর্মসূচিতে কেউ বক্তব্য দেননি।