চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন, তবে সরকার সেটি অর্জন করে দেখাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৫ শতাংশ হবে বলে জানাত। এসব সংস্থা এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এখন ৬.৫ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে এ অর্জন সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ’ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পাওয়ায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার আবারো জনগণকে উৎসর্গ করে বক্তব্য দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডাটা সেন্টার প্রকল্প অনুমোদন : একনেক বৈঠকে গাজীপুরে চার স্তরের জাতীয় ডাটা সেন্টার স্থাপনসহ আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জনপ্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে জাতীয় ডাটা সেন্টার স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাত একর জমির ওপর ডাটা সেন্টারটি স্থাপন করা হবে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে ডাটা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সব কার্যক্রম কাগজবিহীন হয়ে যাবে। ফাইল টানাটানির দিন শেষ হয়ে যাবে।
একনেক সভায় চারটি প্রকল্পের জন্য মোট দুই হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে এক হাজার ৮৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য এক হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
অন্য প্রকল্পের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদ পুনঃখনন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মোট ব্যয় ১৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ রক্ষার্থে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবসহিষ্ণু প্রকল্প সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেয় একনেক সভা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১৫ কোটি টাকা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের শুরুতে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। আমি আশাবাদী বাঙালি পারবে, কারণ আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত প্রবৃদ্ধি বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা সৌভাগ্যবান। আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
দেশের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার লক্ষ্য, বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা। বাংলাদেশকে নিয়ে কেউ নেতিবাচক কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় যদি ১৬ কোটি মানুষকে রাখা হতো, তাহলে ওখানেও উন্নয়ন করা সম্ভব হতো না। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি আমরা করেছি।’ তবে সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।