ঢাকা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:৪৩:৫২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

২০২০ সালের মধ্যে ইসলামিক বাংলাদেশ!

| ৩০ বৈশাখ ১৪২২ | Wednesday, May 13, 2015

তারেক মাহমুদ, চট্টগ্রাম॥

আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এরও সাহায্য নেওয়া হতে পারে।

সোমবার জেএমবির চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার এরশাদ হোসেন মামুনকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশগুলোকে নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে ‘ইসলামিক ল অ্যান্ড ফোর্স অব হিন্দুস্তান’।

গত অক্টোবরে সিরিয়া থেকে চট্টগ্রাম সফর করে আইএসের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হিজবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে বৈঠক করেন।

গোয়েন্দারা বলছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গি নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন জেএমবি প্রধান সাঈদুর রাহমান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানিসহ হুজি’র কয়েক শীর্ষ নেতা। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সোমবার সকালে জেএমবির কমান্ডার এরশাদ হোসেন ওরফে মামুনকে গ্রেফতার করে আকবর শাহ থানা পুলিশ। চট্টগ্রামের নিউ মনসুরাবাদ বাগানবাড়ী সংলগ্ন শাপলা মোড়ে রেললাইনের কাছে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরোল উপজেলার বালান্দরপুর গ্রামে।

পুলিশের দাবি, মামুন ২০০৫ সাল থেকেই জেএমবির চট্টগ্রাম জেলা শাখার কমান্ডার।

জিজ্ঞাসাবাদে এরশাদ হোসেন জানান, হুজি, হিজবুত তাহরির ও ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছে জেএমবি। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের কিছু এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। পরে তারা পুরো বাংলাদেশকে নি‌‌‌জেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে।

সাবেক শিবির নেতা এরশাদ পুলিশকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ছদ্মবেশে জেএমবির এক হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে। তারা জিহাদের জন্য প্রস্তুত। এদের অনেকেই পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে শাখা খোলার ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা। ৫৫ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় সংগঠনটির প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদার এই শাখা বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের জম্মু-কাশ্মির, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও আসামের মুসলিমদের জন্য একটি শুভ সংবাদ। ভূখণ্ড স্বাধীন করার জন্য, ইসলামী সার্বভৌমত্ব ও খলিফা যুগ ফিরিয়ে আনতে আল কায়েদার শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ গড়ে তুলুন।’

আল কায়েদা প্রধান বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিভক্তকারী কৃত্রিম সীমান্ত নবগঠিত বাহিনী ভেঙে দেবে। মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর অবিচার ও তাদের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য নতুন শাখা কাজ করবে।’

পুলিশ বলছে, আল কায়েদা প্রধানের ওই ঘোষণা অনুযায়ী জঙ্গি সংগঠনগুলোর পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। গত মাসে চট্টগ্রাম থেকে জঙ্গি সংগঠনের মধ্যম সারির কয়েকজন সংগঠককে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশ। গত সেপ্টেম্বর থেকেই আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে জঙ্গিদের বিস্ফোরণে নিহত হন দুজন। ওই বিস্ফোরণের পর দেশটিতে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তদন্তে অন্য জঙ্গি সংগঠনের পাশাপাশি নাম উঠে আসে জেএমবি’র।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করছে হুজি, জেএমবি ও জামায়াত-শিবিরের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ওপর হামলা চালানোর লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।’

পুলিশের দাবি, জামায়াতে ইসলামী কৌশলে জেএমবি’র সঙ্গে একযোগে বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

ছদ্মবেশী সদস্য

পুলিশ হেফাজতে এরশাদ হোসেন মামুনের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। চট্টগ্রাম জেলায় তার নেতৃত্বে ১৫ জন কমান্ডার থাকার কথা জানান এরশাদ। তাদের অধীনে আছেন ১৫০ জন এহসার সদস্য এবং ৫০০ জন আনসার সদস্য।

সদস্যদের গ্রেফতার এড়াতে তাদের পরিচয় এড়িয়ে যান এরশাদ। তবে তারা স্টেশনারি বিক্রেতা, দিনমজুর ও হকারের মতো নানা ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িত। সাংগঠনিক যোগাযোগ সহজ করার জন্য শহরের ঘন জনবহুল এলাকায় ছোট ছোট দোকান দিয়েছেন কোনও কোনও সদস্য। ২০১৪ সাল থেকে এরশাদ নিজেও স্টেশনারি দোকানে কাজ করেন।

আনসার সদস্যরা শুধু তাদের একধাপ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

চট্টগ্রাম আনসারের প্লাটু কমান্ডার আব্দুল হামিদ জানান, ‘আমরা জানতে পারি এরশাদ কাউকে ফোন করার জন্য এক নারীর মোবাইল ব্যবহার করতে চাইতো। তবে অন্যের মোবাইল ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে সে বিষয়টি এড়িয়ে যেত। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য আমরা তার ভাড়া করা বাসায় যাই। সেখানে আমরা নানা সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক বস্তু দেখতে পাই। পরে আমরা পুলিশকে খবর দেই।’

এরশাদ জানান, ২০১১ সালে দিনাজপুরের বালান্দোর উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এসএসসি পাস করার পর গাইবান্ধায় এক সাংগঠনিক বৈঠকে আল ফুয়াদ ওরফে রকি নামের এক শিবির নেতার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। পরে রকি বগুড়ায় জেএমবিতে যোগ দেয়। তাকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমান্ডার করা হয়। পরে এরশাদকে চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার করেন রকি। তবে পুলিশ রকিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার আরশাদকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

সারাদেশে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে জঙ্গিদের পুনর্বিন্যাসের কথা স্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নেতাদের গ্রেফতার ও দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে বদ্ধপরিকর।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আমরা একটি বিশেষ বাহিনীর প্রস্তাব করেছি।’