সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোনো সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ১৯৭৪ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন (বিলুপ্ত) ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পর বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি। অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক এক রায়ে হাইকোর্ট এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে গতবছর ২৩ নভেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায় ঘোষণা করেন। গতকাল রবিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আদালত গুরুত্বপূর্ণ এ রায়ে পাঁচটি পর্যবেক্ষণ ও ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে এ বিষয়ে ২০১১ সালে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করেছেন। রাজধানীর ৯৮ বড়মগবাজারের ইষ্টার্ন রোকেয়া টাওয়ারের (২/৪০৪) বাসিন্দা আবদুল হাই একটি রিট আবেদন করেছিলেন। অর্পিত সম্পত্তির আইনের কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব অর্পিত সম্পত্তির আইনগত দাবিদার নেই, সে সম্পদ শুধু মানবিক উন্নয়নকাজে ব্যবহার করতে হবে। যেসব সম্পদ সরকারের অনুকূলে অর্পিত হয়েছে, সেসব সম্পদ ব্যবহারের জন্য আইন করতে হবে। যেসব সম্পদ আইনগত অধিকারীকে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় সে ক্ষেত্রে আইনগত দাবিদারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে আইন করতে হবে। এসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক বিশেষায়িত ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালকে আইনে (২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন) বেঁধে দেওয়া সময়সীমা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ১৯৭৪ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন (বিলুপ্ত) ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পর বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। এ ধরনের বেআইনি কাজে জড়িতরা দায়ী থাকবে। এ বিষয়ে ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট অনেক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ১৯৮০ সালের ১৮ জুনের পর থেকে তালিকা করার কাজে নিয়োজিত থাকা আদালত অবমাননার শামিল। রায়ে আরো বলা হয়, ২০০১ সালের আইনকে (২০১৩ সালে সংশোধিত) কার্যকর করতে হলে ১৯৭৪ সালের আইন ও ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশের আংশিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আদালত পর্যবেক্ষণে আরো বলেন, ১৯৬২ সালে করা পাকিস্তানের সংবিধান আদৌ কোনো সংবিধান নয়। এতে পাকিস্তানের গোটা জাতির প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এটি করেছিল একজন অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী স্বৈরশাসক।
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ফারুক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্তের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন।