ঢাকা, মার্চ ২৮, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৬:৩৮:০২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও নজরদারি চাই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও উপনেতা আনিসুল ইসলাম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

হিন্দু নাগরিকদের দিয়ে ২২শে জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে

| ১৫ পৌষ ১৪২৪ | Friday, December 29, 2017

বাস্তুচ্যুত ৪৫০ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নাগরিককে রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে আগামী ২২শে জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আইয়িকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইটস অব মিয়ানমার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যমের ওই রিপোর্টে কিছুই বলা হয়নি। রিপোর্ট মতে, রাজধানী নেপি’ডতে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে পুনর্বাসনমন্ত্রী প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে ২২শে জানুয়ারি সীমান্তে ৪৫০ হিন্দু শরণার্থীকে ফেরত নেয়ার কথা জানান। মানবাধিকার কমিশনের তরফে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে ঢাকায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী দুটি বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ।

 

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের পৃথক ওই সভা দুটি হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায়। উভয় বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সভাপতিত্ব করেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব মানবজমিনকে বলেন, দুটি বৈঠকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবিত পরবর্তী ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। ২৩শে নভেম্বর সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে পরবর্তী মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের চুক্তি হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছি। এখন এটি মিয়ানমারকে পাঠাবো। আগামী মাসে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এটি সই হতে পারে বলে আভাস দেন পররাষ্ট্র সচিব। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে কাজ করছে সরকার। এ নিয়ে নভেম্বরে নেপি’ডতে সই হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্টের শর্ত মতে দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২২শে জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর যে ডেটলাইন রয়েছে তা ধরেই সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেকনিক্যাল কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করতে দু’চার দিন দেরি হলেও এটি হওয়ার বিষয়ে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারের অন্য দায়িত্বশীল সূত্রগুলোও বলছে, মিয়ানমার যেভাবে প্রস্তাব করেছে তা মেনে নেয়ায় এখন প্রত্যাবাসন শুরু করতে খুব একটা জটিলতা নেই। তাছাড়া এটি শুরুর বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চাপ রয়েছে। যা নেপি’ডর পক্ষে অগ্রাহ্য করা প্রায় অসম্ভব। কর্মকর্তারা এ-ও বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাখাইন এখনও প্রস্তুত নয়। সেখানে এখনও লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হওয়ার বিষয়টি বাংলাদশকে বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, ২৩শে নভেম্বর সই হওয়া চুক্তির ধারাবাহিকতায় ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টটি হচ্ছে। সেখানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্বেগ উপেক্ষা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ক্যাম্পে রাখার বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ে একমত। তবে ঢাকার তরফে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া এবং পুড়িয়ে দেয়া রোহিঙ্গা গ্রাম এবং তাদের বাড়িঘর দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং নিজ নিজ বসত ভিটাতেই বাস্তুচ্যুতদের ফেরানোর তাগিদ থাকছে। বাস্তুচ্যুতরা কোন সীমান্ত দিয়ে ফেরত যাবে, সীমান্ত পাড়ি দেয়ার আগে বাংলাদেশের কোন ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকবে, দুর্গম রাস্তা কিভাবে পাড়ি দিয়ে রাখাইন ক্যাম্পে পৌঁছাবে তার বিস্তারিত থাকছে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে। ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ধাপে ধাপে হবে জানিয়ে সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ফেরত যাবে। তাদেরও রাখাইনে ক্যাম্পে রাখা হবে। তবে তাদের ক্যাম্পটি হবে মুসলিম রোহিঙ্গা থেকে সমপূর্ণ আলাদা। অবশ্য অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে হিন্দু-মুসলিম মিলে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১ লাখ লোকের তালিকা করেছে বাংলাদেশ। সেই তালিকা ধরেই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। সেখানে যাদের বিষয়ে আপত্তি দিবে মিয়ানমার তারা ছাড়া বাকি সবাই পর্যায়ক্রমে ফেরত যাবে। উল্লেখ্য, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম এগিয়ে চললেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা বসত ভিটা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রায় ৮০০ গ্রামের অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৮ গ্রাম বর্মী বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছে।