ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৮:১৯:০৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক স্কুল ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় : হিন্দু বাড়ির দরজায় দুই বখাটে রেখে গেল গরুর মাংস ও নাড়িভুড়ি ।

| ১০ চৈত্র ১৪২৫ | Sunday, March 24, 2019

হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক স্কুল ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তিনটি হিন্দু বাড়ির ঘরের দরজা-জানালায় গো-মাংস, নাড়িভুড়ি, কাঁচা চামড়া ও হাড় টাঙ্গিয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের দুই যুবক। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে।

বাড়ির দরজা থেকে পুলিশ মাংস উদ্ধার করার পর থানায় জিডি করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত শুক্রবার ভোরে এমন ঘটনা ঘটার পর রবিবার সকালে ওই বাড়িগুলো পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ, কমলগঞ্জ হিন্দু বুদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।  গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের মুরব্বীরাও ওই তিন বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দেন এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দুই বখাটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ জানান, করিমপুর গ্রামের সাদত মিয়া (১৯) নামের এক বখাটে তার সহযোগী সজিব মিয়াকে নিয়ে গ্রামের শফিক মিয়ার বিয়ে বাড়ির একটি অনুষ্ঠান থেকে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস, পা, হাড়, মাথা, দাঁত, চামড়া ও নাড়িভুড়ি সংগ্রহ করে শুক্রবার ভোররাতে বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার (৫০), প্রণয় মালাকার (৪৫) ও বীরেন্দ্র মালাকার (৫২) এর ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথমে অধীর মালাকার বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ আশপাশ এলাকার লোকদের অবহিত করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে বেলা ১২টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা থেকে গো-মাংস সরিয়ে ফেলে এবং ধোঁয়ামুছা করে ঘরের লোকজন বের হন।

বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার বলেন, তাঁর মাতৃহারা দশম শ্রেণি পড়ুয়া ভাতিজিকে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামের চেরাগ মিয়ার ছেলে সাদত মিয়া (১৯) দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করে আসছে। মেয়েটি এ ঘটনা তার কাকিকে বলার পর সামাজিকভাবে ছেলের অভিভাবকদের জানানো হয়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে সাদত অন্য একটি ছেলেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে এবং গ্রামবাসী ঘটনার কারণ খোঁজে বের করার কথা বলার পর সাদতের বড় ভাই হায়দর মিয়া তাদের বাড়িতে এসে তার ভাই এঘটনার সাথে জড়িত বলে জানায় এবং ক্ষমা চায়।

গ্রামের অধীর মালাকার, প্রহ্লাদ মালাকার ও জগদীশ মালাকার বলেন, করিমপুর গ্রামের সফিক মিয়ার বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠানে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস এনে রেখেছে। এটি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

স্থানীয় মুসলমানরাও এঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় আমার পক্ষে সামাজিকভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি তবে এটি সমাধানের জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাতের ঘটনা। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক জঘন্য ঘটনা না ঘটে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন।

মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনাটি আমার ইউনিয়নের জন্য একটি কলঙ্কজনক বিষয়। আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সকল ধর্মের মানুষ বহুদিন সুন্দরভাবে সহাবস্থান করে আসছে। বিষয়টি সামাজিকভাবে স্থানীয় মায় মুরব্বীরা বসে সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। সামাজিকভাবে সম্মানজনক সমাধান না হলে পুলিশ আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অভিযোগ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত সাদত মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে সাদতের মা নাজমা বেগম স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে প্রেম কিংবা উত্ত্যক্তের প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, আমার ছেলে না বুঝে যে ঘটনা ঘটিয়েছে এজন্য আমরা পারিবারিকভাবে শাস্তি দিয়েছি এবং পঞ্চায়েতের ময়মুরুব্বিরা বৈঠকে বসে যে শাস্তি দিবেন সেটি মেনে নেব।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুধীন চন্দ দাস বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে এবং এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে যাতে কেউ কোন ধরণের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পেরে সেজন্য কমলগঞ্জ থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান। একই সাথে তাদের সান্ত্বনা দিতে তিনিও সরজমিনে একবার যাবেন বলে জানান।