ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৫:৩০:৪৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

হিন্দুরা যাবে কোথায় ?

| ১১ বৈশাখ ১৪২২ | Friday, April 24, 2015

জোর করে হিন্দুদের দেশছাড়া করতে মরিয়া এক শ্রেনীর মানুষ। কারন হিন্দুদের তাড়ানো অনেক সহজ। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বিনা উস্কানিতে হামলা, তাদের জায়গা দখল, মন্দির ভাংচুর, দোকানপাটে লুটপাট বা অগ্নিসংযোগ নতুন কোন ঘটনা নয়।আবার এর কোন নির্দিষ্ট সময়ও নেই। সম্পত্তিতে কোনরকম চোখ লাগলেই হলো। তারপর হিন্দু সম্পত্তি যে যার মতো দখল করো,লুটপাট, নির্যাতন যতোই কর কেউ কিছু বলবে না।থানায় বড়জোড় একটাবা দুটো মামলা হতে পারে এই যা। তাতে পুলিশ যে কোন ভুমিকা রাখবেনা এটা সবার জানা।
অনেকে আছেন যারা হিন্দু সম্পত্তি দখলের জন্য ওই পরিবারকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করেন সারা বছর। তাতেও দেশ ত্যাগ না করলে বাড়ি জায়গা দখল বা লুটপাটের মৌসুম খোঁজেন। এই মৌসুম হলো নির্বাচন।নির্বচন পরবর্তীবা পূর্ববর্তী সময়ে নির্যাতনের যে ধারাবাহিকতা চলে আসছে তাতে হিন্দু সম্প্রদায় মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে সব গনসংগ্রামের পুরোভাগে থাকার পরও তাকে পূর্ন নাগরিকের মর্যদা দেয়া হয় শুধু ভোট প্রদানের সময়।তার আগে বাি পরে চলে অত্যাচার-যা অসহনীয়।একরনে হিন্দুরা দেশ তদ্যাগ করছে প্রতিনিয়ত। গিয়ে এখান থেকে ভালো থাকেনা। খাওয়া- থাকা জীবনমান থেকে জীবন যাপন কোন জায়গায় না। তারপরও চলে যায় নিশ্চিন্তে থাকার জন্য- প্রতিটি রাতে আতংকহীন ঘুম ঘুমানোর জন্য। যে কারনে আদম শুমারিতে উঠে এসেছে- বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা ছিল ২৩.১ ভাগ। কিন্তু সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৯ ভাগে নেমে এসেছে। আদম শুমারীর তথ্য থেকে দেখা যায় এই দেশে  ১৯৬১ সালে ১৯.৬ ভাগ, ১৯৭৪ সালে ১৪.৬ ভাগ, ১৯৮১ সালে  ১৩.৩ ভাগ, ১৯৯১ সালে ১১.৭ ভাগ এবং  ২০০১ সালে ১০.৪ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র ৯ ভাগ। দিনের পর দিন আওয়ামীলীগে ভোট দেয়ার কারন দেখিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নিরবচ্ছিন্নভাবে হামলা চলছেই। এজন্য আওয়ামী লীগ দলটিরও কোন মাথা ব্যাখা নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতন প্রশ্নে তাদের ভাবট এমন যে ‘নে কি করবি তোরা হচ্ছিস সংখ্যালঘু। এমন একটু আধটু সমস্যাতো সহ্য করতে হবেই। সঙ্গে আরেকটা ভালো লাগাও কাজ করে এই ভেবে যে , তোরা (হিন্দুরা) দেশে থাকলে ভোট টা আমার আর চলে গেলে জমিটা আমার।  এর চেয়েও অবাক হওয়ার ঘটনা হলো হিন্দু জায়গা দখলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মধ্যে কোন ভেদ নেই।সম্প্রতি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার চন্দনপু গ্রামে ঘটে যাওয়া এক ঘটনাসব নির্মতাকে হার মানিয়েছে।  সেখানে বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আকন, যুবলীগের জাকির হোসেন ও  আওয়ামীলীগের আব্দুস ছালাম মিলে তাদের বাহিনীসহ গত ২৩ মার্চ চন্দনপুর গ্রামের ১৪টি হিন্দু পরিবার অধ্যুষিত এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এবং বিভিন্নভাবে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে  এলাকা ছাড়া করে। সন্ত্রাসীরা ওই পরিবারের ফেলে যাওয়া বসতভিটা এবং ফসলী জমি দখল করে নেয়। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো হলো- কার্তিক রায়, হরেন রায়, যাদব সরকার, মাদব সরকার, ধীরেন সরকার, সুবাস সরকার, রমেশ সরকার, রিপন রায়,নীপা রানী, নরজিত্ সরকার, শ্যামল সরকার, সুমন্ত, বাবুল ও জিতেনের পরিবার।এসব পরিবার উচ্ছেদ হওয়ার পর বরগুনা জেলা শহরসহ  বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।পরবর্তীতে মিডিয়ায় বিষয়টি আসলে জেলা প্রশাসন তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়েছে। ধংসযজ্ঞের উপর তাদের আবার বসানো হলেও আতংক তাদের এখনও কাটেনি।রাজধানীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যস্ততা চলছে। এরমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বনগ্রাম এলাকায় হিন্দু সম্প্র্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে ও মন্দিরে হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে গত রোববার রাতে। শহরের বনগ্রাম এলাকায় শ্রীশ্রী সুধন্য কৃপাময়ী কালীমন্দির এবং আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে এ হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সুনীল চন্দ্র প্রাল (৩৫), আসাদুল হক (৫০), সফিকুল ইসলাম (২৮), রাসেল মিয়া (৩০), মুজিবুর রহমান (৫০) ও মিস্টারের (৩৫) নাম জানা গেছে।এলাকাবাসী জানিয়েছে,রোববার রাতে বনগ্রাম এলাকায় সন্ত্রাসী রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২টি মাইক্রোবাসযোগে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী মন্দিরের কাছে গিয়ে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের পুলিশের পোশাকের মতো পোশাক পরা ছিল। প্ররে তারা ভয়-ভীতি দেখি য়ে সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাডড়র টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। ভাঙচুর শেষে ওই বাড়ি থেকে টাকা ও মালামাল লুটপাট করে।একই সময় পাশের মন্দির ও লাল মোহন বর্মণ, সুনীল চন্দ্র বর্মণ, সতীন্দ্র বর্মণ, নিরঞ্জন চন্দ্র বর্মণসহ ২০-২৫টি বাড়তে ও পাঁচটি দোকানে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা। কালীমন্দিরের কালী প্রতিমা, মহাদেব ও রাগিণী যোগিনীসহ চারটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন নারী, শিশুসহ কমপক্ষে সাতজন। ভাঙচুরের খবর পেয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপ্রার হারুন অর রশীদ, জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল হাসান যথারীতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারপরে আর কিছু করেন নি।এখন পর্যন্ত দোষীরা কেউ গ্রেফতার হয়নি। ঘটনার শেষ এখানেই নয়Ñ একটি হিন্দু পরিবারকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করতে সারা বছর ওই পরিবারকে নানাভাবে নির্যাতন করেও যখন হিন্দু পরিবারটিকে কাবু করা যায়না- কিন্তু ওই পরিবারের জায়গা- জমির কথাতো সে এক মুহূর্তও ভুলে থাকতে পারে না অতঃপর হিন্দু পরিবারটিকে সে পাকড়াও করে নির্বাচনের আগে বা পরে। তাকে আক্রমনের কারনটা ধরা হয় আওয়ামী লীগে ভোট প্রদান।হিন্দুরা যাকেই ভোট দিক তাতে কিছু আসে যায় না। যাকেই ভোট দিক - ধরে নেয়া হবে হিন্দু যখোন ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগে।যতই সে বলুক সে আওয়ামী লীগে ভোট দেয়নি তাতে কিছু যায় আসে না। ‘তুমি শালা মালাউন তুমি আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছ।’ এ যেন সেই নেকড়ের গল্পের মতো। ছোট একট খাল দিয়ে জলের ¯্রােত আসছে। কাকচক্ষু জল দেখে একটি মেষ শাবক গান করছিলো।এ সময় ওখানে গান করতে আসে একটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে। নেকড়েটি মেষ শাবকককে জিজ্ঞেস করে -এই তুই আমার পানের জল ঘোলাচ্ছিস কেন? মেষ শাবক উত্তর দেয়- আমি কোথায় ঘোলাচ্ছি। আমার পানের জলতে স্রোতে অন্য দিকে ভেসে যাচ্ছে। সে আপনাকে নাগাল পাবে কিভাবে? এবার নেকড়েটি বললো, তুই না ঘোলালে তোর বাবা ঘুলিয়েছিলো, নয় তোর ঠাকুর দাদা। বলে নেকড়েটি মেষ শাবকটির উপর ঝাপিয়ে পড়লো তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে।রাজধানীর উপকণ্ঠে সন্ত্রাসীরা যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর  সাহস পায় এবং তারপর যদি প্রশাসন নিরব থাকে তাহলে আমরা কি বুঝে নেব যে- মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।এই ঘটনার  বিকচার না হলে বা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে- হিন্দুদের ডেকে বলে দেয়া ভালো যে- এমনই চলবে। ইচ্ছে হলে থাকো না হয় দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাও।লেখক: নির্বাহী পরিচালক,শারি