চাকরিক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গতকাল গভীর রাতে বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আজ সোমবার ঢাবির ভিসি বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে আমার পরিবারের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমি সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবিটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। তখন সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, এ বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে দেখছে।’
‘এই কথাটি আমি যখন শিক্ষার্থীদের বলতে আসি, তখনই রাত ১টার দিকে লোহার রড দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে প্রাণনাশের জন্য হামলা করা হয়,’ যোগ করেন ভিসি।
সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে গতকাল রোববার থেকে সারা দেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বানে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
রাত পৌনে ৮টায় শাহবাগে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা ঢাবি এলাকা। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এরপর দফায় দফায় চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর সংঘর্ষ। বাড়তে থাকে আহতের সংখ্যা, যেখানে ছিল পুলিশ সদস্যও। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন।
এসব বিষয় নিয়ে সোমবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, ‘লাশের রাজনীতির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে।’
অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল রাতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এরা প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, এরা লাশের রাজনীতির জন্য এই তাণ্ডব চালিয়েছে।’
ভিসির বাসভবনে হামলায় একদল মুখোশধারী অংশ নিয়েছিল দাবি করে উপাচার্য বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীরা এমন কাজ করতে পারে না। এখানে বহিরাগতরা জড়িত। বিডিয়ার বিদ্রোহের হামলাকারীদের মতো মুখোশ পরে তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। তাদের হামলার ধরন দেখেই বোঝা গেছে, যে তারা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, এরা প্রশিক্ষিত একটি দল।
‘আশপাশে কয়েকজন যদি আমাকে না বাঁচাত, তাহলে আমি হয়তো আপনাদের সামনে বসে কথা বলতে পারতাম না। আমার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়।’
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘হামলার আলামত নষ্ট করতেই ভিসি বাসভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুরসহ সেখানের হার্ডডিস্ক চুরি করে নিয়ে গেছে। পুরো ভবনের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা করা থেকে শুরু করে সব আইনি প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। কারণ ভিসি এবং ভিসি বাসভবন সরকারি সম্পত্তি, হামলার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও সরকারের।’