সচিবালয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও পূর্ণিমা রানী শীল। ছবি : প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক থেকে নেওয়া
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১৪ বছরের কিশোরী পূর্ণিমা রানী শীল। এরপর বহু নদীর পানি সাগরে মিশেছে, পূর্ণিমার জীবনেও এসেছে নানা উত্থান-পতন।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের ওই ঘটনায় ১৭ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন পূর্ণিমা। ঘটনার ১০ বছর পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর ২০১১ সালের মে মাসে ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং জরিমানার অর্থ পূর্ণিমাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করেছেন পূর্ণিমা। লেখাপড়া শেষ করেছেন, চাকরি করেছেন, বাচ্চাদের গান শেখানোর কাজ করেছেন। তবু হয়রানি তাঁর পিছু ছাড়েনি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পূর্ণিমা জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব হয়রানির কারণে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পূর্ণিমা। বলেছিলেন অন্য কোনো দেশে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চান তিনি।
তবে অন্য কোনো দেশে গিয়ে নয়, বাংলাদেশেই নতুন জীবন শুরু করলেন পূর্ণিমা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করবেন তিনি।
তারানা হালিমের ইচ্ছাতেই পূর্ণিমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মীর আকরাম। আজ বুধবার এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর অভিপ্রায়ে পূর্ণিমাকে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে।’
অবশ্য এই নিয়োগের কথা নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজেও জানিয়েছেন তারানা হালিম। পূর্ণিমার সঙ্গে তোলা কিছু ছবি পোস্ট করে প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, “মনে পড়ে সেই পূর্ণিমাকে? ২০০১ এর ১ অক্টোবর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামাতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। হ্যা, আমি সিরাজগঞ্জের সেই পূর্ণিমা শীলের কথা বলছি। আজ আমি গর্বিত। আমি পূর্ণিমাকে আমার ‘পার্সোনাল অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ দিলাম। পূর্ণিমা, তোমাকে আমরা ভুলে যাইনি। জীবনের অন্ধকার রূপ তুমি দেখেছ, আলোর জগতে তোমায় স্বাগতম… শুরু হোক নতুন পথচলা। তোমাকে অভিবাদন প্রিয় পূর্ণিমা।”