ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৪:০০:৪৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি ‘মাছ-মাংসের আশা করি না, শেষ ভরসা সবজিতেও আগুন’ দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

সাঈদীর চূড়ান্ত রায় বুধবার

| ১ আশ্বিন ১৪২১ | Tuesday, September 16, 2014


মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আপিল বিভাগের পরবর্তী দিনের কার্যতালিকায় রায়ের তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে জামায়াত নেতার আপিলটি।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর, রায় হয় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।

রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল তা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আপিল বিভাগ। তার পাঁচ মাস পর রায়ের দিন জানানো হল।

একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদীর মামলার চূড়ান্ত রায় দেবে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে সাঈদী দ্বিতীয় ব্যক্তি যার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে তার দলেরই নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর গত বছরের ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।

গত এপ্রিলে আপিল শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা প্রকাশ করেছিলেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি বজায় থাকবে।

অন্যদিকে সাঈদীকে আইনগতভাব শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি সাঈদী।

তবে এর মধ্যে মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলে সহিংস বিক্ষোভে নামে জামায়াতকর্মীরা।

রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াতের তাণ্ডবে নিহত হন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। পুড়িয়ে দেওয়া গাড়ি, বাড়ি এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর একে একে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় তাদের, চলতে থাকে বিচার।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি।

এর পরের মাসের ৫ তারিখে দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১২ ডিসেম্বর ওই দণ্ড কার্যকর হয়।

তৃতীয় রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের আজীবন কারাদণ্ড হয়।  মৃত্যুদণ্ড হয় দলটির নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামানের।

সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

 আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হলেও আগের দুটিতে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সেগুলোতে কোনো দণ্ড দেয়নি আদালত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এখন চূড়ান্ত রায় দেবে আপিল বিভাগ।

আপিলের শুনানিতে আসামি পক্ষ ঘুরেফিরে এটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে যে রাজাকার সাঈদী এবং জামায়াত নেতা সাঈদী এক ব্যক্তি নন।

সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আপিল বিভাগে শুনানির পর বলেছিলেন, “যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সব ঘটনা সত্যি হতে পারে। তবে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী তাতে জড়িত নন। অভিযুক্ত হিসাবে দেলাওয়ার শিকদারের পরিবর্তে দেলাওয়ার সাঈদীকে করা হয়েছে।এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তখন বলেছিলেন, “তারা দেলাওয়ার মল্লিক-শিকদার ইত্যাদি কথা বলেছেন। জেরায় তারা আমাদের সাক্ষীদেরকে দিয়ে সাজেশন দিয়ে এ কথা বলানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের সাক্ষীরা কোথাও এটা বলেনি।”

 ধর্মীয় বিষয়ে সুবক্তা’ হিসাবে সাঈদীর পরিচিতি রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

সাঈদীর রায় দেওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ফজলে কবীরও আসামির সুবক্তা পরিচিতি,সংসদ সদস্য হওয়া, জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলেন, “আজ যার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত দেলু নামে।”

“সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভাল বলতে পারতেন বলে পাকিস্তানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।”

তাদের এই রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আশা