কুষ্টিয়ার সরকারি কর্মকর্তার হাত কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরাভেড়ামারা এলাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার ডান হাত কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর নাম নিপুণ কুমার নন্দী (৩৪)। তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ভেড়ামারা পাটবীজ উৎপাদনকেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক। বর্তমানে তিনি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিপুণ রাজবাড়ীর খানখানাপুর এলাকার নারায়ণ কুণ্ডুর ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া শহরের লাহিনীপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএডিসি পাটবীজ বিভাগের উপপরিচালক গৌতম কুমার কুণ্ডু বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করে ভেড়ামারা মডেল থানায় মামলা করেছেন।
নিপুণের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাসান বলেন, এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে দুর্বৃত্তরা কাজ শেষ করেছে। মোটরসাইকেল থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে ডান হাত কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তারা নিপুণকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস বা মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের কোনো চেষ্টাও করেনি। হাত কাটার পরপরই তারা পালিয়ে যায়।
আশিস বিন হাসান আরও বলেন, নিপুণের সঙ্গে অন্য কোনো পূর্বশত্রুতাও থাকতে পারে। দুর্বৃত্তদের টার্গেট অন্য কেউও থাকতে পারে। নিপুণের সঙ্গে আরও কথা বললে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভেড়ামারায় অফিসের কাজ শেষে নিপুণ তাঁর ব্যবহৃত সরকারি মোটরসাইকেলে (কুষ্টিয়া-হ-১৩-২৫২৮) করে কুষ্টিয়া শহরের বাসায় ফিরছিলেন। কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের বারমাইল এলাকায় ভেগান এগ্রো লিমিটেডের ২০০ গজ উত্তর দিকে তিন-চারজন দুর্বৃত্ত মোটা রশি দিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। গতি কমার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিপুণের ডান হাতে কোপ দেয়। এতে তাঁর ডান হাতের কনুই থেকে নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় নিপুণের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁকে ঢাকায় আনা হয়।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। বিকেলে এবি-১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৮ নম্বর বেডে তাঁকে স্থানান্তর করা হয়। নিপুণের অস্ত্রোপচারকারী এক চিকিৎসক বলেন, নিপুণের হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ জন্য তাঁকে ছয় ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। বেশ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাতটি কাটা পড়েছে। হাতের কাটা অংশটি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিপুণের যে হাতটি কেটে ফেলা হয়েছে, সেই হাতটি যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। নিপুণ এখন শঙ্কামুক্ত।
হামলার কারণ সম্পর্কে নিপুণের শ্বশুর বাবুল কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, শান্ত স্বভাবের ছেলে নিপুণ। কারও সঙ্গেই ওর বিরোধ ছিল না। মনে হচ্ছে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্য হামলা চলানো হয়েছে।
নিপুণের স্ত্রী দোলা কুণ্ড প্রথম আলোকে বলেন, ‘আহত অবস্থায় নিপুণ আমাদের জানান চার যুবক তাঁকে আক্রমণ করেছিল। তবে এদের সবাই ওর অপরিচিত।’
এদিকে গতকাল সকালে ঘটনাস্থল থেকে নিপুণের মোটরসাইকেল ও দড়ি উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানার পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে সড়কের উভয় পাশে জঙ্গল। আশপাশে ৪০০ গজের মধ্যে কোনো বাড়িঘর নেই। নিপুণের মোটরসাইকেলে ছিল রক্তের দাগ।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।