সঙ্কট প্রকট হচ্ছে জাতীয় পার্টিতে। ক্ষমতা আর আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দলটি এখন দৃশ্যত দুইভাগে বিভক্ত। এ বিভক্তি বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতেও। গতকাল আলাদা দু’টি বৈঠক করেছেন বিরোধী দলের এমপিরা। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ তার অনুগত এমপিদের নিয়ে সংসদীয় দলের বৈঠক করেছেন। এতে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ কয়েকজন এমপি অংশ নেননি। তারা আলাদা বৈঠক করেন এরশাদের কার্যালয়ে। এতে দলের সিনিয়র এমপি ও পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। রওশনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের বৈঠক হলেও এতে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টি চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠক হতে পারে না- এমন দাবি এরশাদপšি’ নেতাদের। সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচন নিয়ে চলা টানাপড়েনের মধ্যে গতকালের সংসদীয় দলের বৈঠকে এরশাদ-রওশন মুখোমুখি হওয়া এবং আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হবে এমনটি আশা করেছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু উল্টো দুই নেতা অনুগতদের নিয়ে বৈঠক করায় হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। এর মাধ্যমে পার্টিতে যে সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও মিলছে। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটায় সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর এরশাদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সংসদ ভবনে যান। এর কিছুক্ষণ পর যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পরে তারা এরশাদের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানে এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু, মো. নোমান, এমএ হান্নানসহ সাত থেকে আট জন এমপি উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের সম্মেলন কক্ষে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের ৪০ জন এমপির মধ্যে ২৮ জন অংশ নেন।
বিকাল ৫টার দিকে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এরশাদ এতে যোগ দেন। তবে মিনিট পাঁচেক অধিবেশনে যোগ দিয়েই তার কক্ষে ফিরে যান বুকে ব্যথার কথা বলে। বৈঠক শেষে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সাংবাদিকদের বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বান করার এখতিয়ার আর কারো নেই। তাছাড়া, তারা বৈঠকের বিষয়টি জানেনও না। এ প্রশ্নে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় দল চলে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নয়। বিরোধীদলীয় নেতার আদেশে হুইপ সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। এছাড়া, বৈঠকের বিষয়টি আজও সকালে তিনি এরশাদের একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আকতারকে এসএমএস পাঠিয়ে অবহিত করেছেন। তবে রওশনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার কাছে সবাই সমান। বৈঠক শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৈঠকে তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরবর্তী সংসদীয় দলের সভায় নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া, দলীয় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে জাপার মন্ত্রীদের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সম্প্রতি দলের প্রেসিডিয়াম থেকে রাঙ্গা-তাজুলের অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ পার্টি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। চুন্নু বলেন, সভা মনে করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান যে কাউকে অব্যাহতি দিতে পারেন। তবে তারা যদি কোন ভুলত্রুটি করে থাকেন-তা ক্ষমার চোখে দেখার জন্য তারা সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে বিরোধীদলীয় নেতার মাধ্যমে দলের চেয়ারম্যানকে আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন- এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই রকম কোন আলোচনা হয়নি। আপনাদের বৈঠক চলাকালীন ৫০ গজের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কক্ষে মহাসচিবসহ আরেকটি বৈঠক হয়েছে, সেখানে ৭/৮ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রওশন ম্যাডাম সকল এমপিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে হয়তো তারা উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে চেয়ারম্যান স্যার কেন আসতে পারেননি তা আমি বলতে পারবো না। সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে সংসদীয় দলের বৈঠকে অংশ না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমারতো অনেক কাজ থাকতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার অপর এক নেতা বলেন, দলের যে অবস্থা তাতে সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে চেয়ারম্যান স্যার বৈঠকে উপস্থিত হননি। এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে জাপার নেতায় নেতায়। একইসঙ্গে এরশাদ-রওশনের মধ্যে নেতৃত্বের সঙ্কট প্রকাশ্যে দেখা গেলেও এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি উপগ্রুপ। যার প্রভাব পড়েছে তৃণমূলেও। পার্টিতে চলা টানাপড়েনে দল ও সরকারে পদ না পাওয়া কিছু নেতা ভূমিকা রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।