সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিল আজ রোববার সংসদে উঠছে। তবে বিলটি পাস হলেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের পদ্ধতি নির্ধারক আইন না হওয়া পর্যন্ত এই সংশোধনী কার্যকর হবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বলেন, সংশোধন বিল পাসের পর এ-সংক্রান্ত আইনটি দ্রুত প্রণয়ন করা হবে। তবে তার আগ পর্যন্ত সংশোধিত ধারাটি অকার্যকর থাকবে। অবশ্য তিনি এর আগে বলেছিলেন, আইন করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও মনে করেন, আইন না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের সংশোধিত ধারাটি কার্যকর হবে না। ১৯৭২ সালেও এমনই ছিল। ফলে অন্তর্র্বতী এই সময়ে কোনো বিচারক অসদাচরণ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সুতরাং সংবিধান কার্যকর করতে হলে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল আজ সংসদে উঠছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদের অধিবেশন শেষ হবে। সে জন্য বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে বেশি সময় দেওয়া হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন বিচারক ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে। বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। এ ছাড়া কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
বিলটি পাস হলে অন্যান্য সাংবিধানিক পদধারী মহাহিসাব নিরীক্ষক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদের কাছে ন্যস্ত হবে। কারণ সংবিধানে বলা আছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের যে পদ্ধতিতে অপসারণ করা যাবে, একই পদ্ধতিতে এসব সাংবিধানিক পদের ব্যক্তিদেরও অপসারণ করা যাবে। একই আইন প্রযোজ্য দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের কমিশনারদের ক্ষেত্রেও।
এর আগে ২৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কমিটি জ্যেষ্ঠ বিচারক ও আইনজীবীদের পরামর্শ গ্রহণ করবে। কিন্তু সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণে আগ্রহী নয়।
গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আগে বিল সংসদে আসুক। তারপর মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।