গত ৩জুন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বারদীতে অনুষ্ঠিত হল শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১২৮তম তিরোধান উৎসব। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব উপলক্ষ্যে দেশ বিদেশের লাখো ভক্তের সমাগমে মুখরিত হয় আশ্রম চত্বর। লক্ষ পুণ্যার্থীর মাঝে সেবা দিতে সেবাক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে পূন্যার্থীদের মাঝে সেবাদান করে ।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন যে সকল সেবাদানে নিয়োজিত ছিল তা হল- দূর-দুরান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থীর সুবিধার্থে শৃংঙ্খলা রক্ষা,হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার ,পানীয় সরবতের ব্যবস্থাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। (চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন ডাঃ শঙ্খ নাথ তরুয়া। উক্ত সেবাক্যাম্প অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী জেনারেল মানিক চন্দ্র সরকার ,বিশেষ অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি নির্মল কুমার সাহা,সাধারন সস্পাদক স্বপন শীল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন বনিক অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি কৃষ্ণ শীল সাঃ সম্পাদক নির্মল দাস ,হিন্দু যুব মহাজোটর সভাপতি সুভাষ সূত্রধর,সাঃ সম্পাদক দিপক বর্মন ,বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট বন্দর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পি দাসসহ যুব ও ছাত্র ও মহাজোটের কেন্দ্রীয়,জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ ।
বাবা লোকনাথের আদ্যোপান্ত
রামকানাই ঘোষাল ও কমলাদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১১৩৭ বঙ্গাব্দের (১৭৩০ খ্রি.) জন্মাষ্টমীর দিন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট থানার স্বরূপনগর-কচুয়া গ্রামে আবির্ভূত হন। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বয়স যখন এগারো বছর, তখন গুরু ভগবান গাঙ্গুলি তাকে ও তার বাল্যবন্ধু বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যয়কে উপনয়ন ও সন্ন্যাস দীক্ষা দেন। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন (১১৪৮ বঙ্গাব্দ, ১৭৪১ খ্রি.)।
প্রথমে তারা আসেন কালীঘাটে, সেখান থেকেই দুই নবীন সন্ন্যাসীর সাধনা আরম্ভ হয়। গুরু ভগবান গাঙ্গুলী শিষ্যদের নানা ব্রত পালন করতে শেখান। অর্থাৎ সারাদিন উপবাস থেকে রাতে আহার, এভাবে একদিন, তিনদিন, পাঁচদিন, বারোদিন, পনেরদিন, শেষে টানা একমাস উপবাসের পরে আহার। এভাবেই নানা ব্রত উদযাপনের পর তারা যান হিমালয় পর্বতে।
এরপর দীর্ঘ নব্বই বছর বরফের উপর কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। এভাবে পূর্ণ-ব্রহ্মত্ব লাভের পর লোকহিতার্থে পৃথিবীর নানা দেশে পর্যটন করেন পায়ে হেঁটে। বিভিন্ন ধর্মের তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে মক্কা-মদিনাসহ বিশ্বপরিক্রমা করেন।
বিশ্বপরিক্রমার পর বন্ধু বেণীমাধবকে সঙ্গে নিয়ে ১৩৩ বছর বয়সে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যান (১৮৬৩ খ্রি.)। সেখান থেকে বেণীমাধব চলে যান কামাখ্যায় আর লোকনাথ ব্রহ্মচারী লোকহিতার্থে অবতরণ করেন সমতলে- তার লীলাক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী গ্রামে।
আপনভোলা এই সন্ন্যাসীকে প্রথমে কেউ চিনতে পারেনি। কথিত আছে একদিন দুই ব্রাহ্মণ যুবকের পৈতেয় প্যাঁচ লেগে যায়। যখন যুবকদ্বয় সেই প্যাঁচ খুলতে পারছিল না তখন তাদের অনুরোধে সন্ন্যাসী শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী গায়ত্রী মন্ত্র জপের পর হাততালি দিতেই পৈতের প্যাঁচ খুলে যায়। এরপরই চারদিকে প্রচার হয়ে গেল অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মহাপুরুষের কথা। পরিচিত হন বারদী ব্রহ্মচারী নামে।
এমন কিছু অলৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি প্রায়শই বলতেন, আমাকে ঠাকুরের আসনে বসিয়ে তিনবেলা পূজা করার প্রয়োজন নেই। শুদ্ধ ভক্তিতে স্মরণমাত্র প্রত্যেকেই আমার সাড়া পাবে।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের (১৮৯০ খ্রি.) ১৯ শে জ্যৈষ্ঠ ১৬০ বছরে মহাপ্রয়াণে যাবার আগে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী সকলকে বলেন, “আমি নেই এ কথা তোমরা কখনো মনে করবে না। আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকবো।”
‘শুধু সুখের সময় নয়, রণে-বনে, জলে-জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিও আমিই রক্ষা করিব’- লোকনাথ ব্রহ্মচারীর এই বাণীই ভক্তদের কাছে অভয়মন্ত্র আজও।