ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৯:১০:২৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

শর্ত নিয়ে মুখ খুলছে না কেউ আদানির অসমাপ্ত প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি বাংলাদেশের

| ৬ অগ্রহায়ন ১৪২৪ | Monday, November 20, 2017

আদানি পাওয়ারের একটি প্রকল্প

ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। তবে ঠিক কোন শর্তে এই ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা নিয়ে দু’পক্ষের কেউই মুখ খুলছে না।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিড থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ নিচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভেড়ামারা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বহুদিন আগেই শুরু হয়েছে। এরপর ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বাংলাদেশের গ্রিডে বিদ্যুৎ যেতে শুরু করেছে। তবে ভারতের বেসরকারি কোনও সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেনার ঘটনা এটাই প্রথম।

আদানি পাওয়ারের যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, সেটি নির্মিত হচ্ছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায়। কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনও তৈরিই হয়নি, এমনকি তার জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়েও আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের বিরোধ চলছে। কিন্তু বিতর্কিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই আগামী সিকি শতাব্দী ধরে বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারে সায় দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

এই সমঝোতার বিষয়টি জানাজানি হয়, যখন গত সপ্তাহে আদানি পাওয়ারের সহযোগী সংস্থা আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) ভারতের বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের ফাইলিংয়ে এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কথা প্রকাশ করে। এই ‘পিপিএ’ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট)-টি সাফল্যের সঙ্গে রূপায়িত হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়ার পর গত ৮ নভেম্বর আদানি পাওয়ারের শেয়ার দরও একলাফে অন্তত চার শতাংশ বেড়ে যায়।

কিন্তু আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই চুক্তির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই চুক্তি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনও বিবৃতিও দেয়নি বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডও।

আদানি পাওয়ারের একটি প্রকল্প পরিদর্শন করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী

ফলে ঠিক কী শর্তে এবং কী দামে বাংলাদেশ আগামী পঁচিশ বছর ধরে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হয়েছে, তার গোটাটাই এখনও রহস্যে মোড়া।

এদিকে বিতর্কিত এই গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। গোড্ডা জেলার চাষীরা অনেকেই তাদের ধানী জমি আদানি পাওয়ারের হাতে তুলে দিতে রাজি হচ্ছেন না। কয়লাভিত্তিক এই প্রকল্পটি এলাকায় ব্যাপক পরিবেশ দূষণ ঘটাবে বলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকের আশঙ্কা।

সোজা কথায়, গোড্ডার এই বিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মতোই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

তবে এটাও ঠিক যে, আদানি শিল্পগোষ্ঠী ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত ঘনিষ্ট বলেই পরিচিত। এই শতকের গোড়ার দিকে নরেন্দ্র মোদি যখন টানা তেরো বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির সাম্রাজ্য ফুলেফেঁপে ওঠে তখনই।

ফলে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের এই চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে দুই দেশের সরকারও অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে বলে বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে। বস্তুত এই বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে দুদেশের কথাবার্তা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত মেয়াদেই, তা এতদিন বাদে এসে চূড়ান্ত রূপ পেলো।

এই পথ ধরে সামনে এগোলে আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প

এদিকে অস্ট্রেলিয়াতেও আদানি গোষ্ঠীর আরেকটি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আদানিদের ওই প্রকল্পটি অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে দেবে বলে পরিবেশবিদরা অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমকি অস্ট্রেলিয়ানরা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন।

ফলে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশ লম্বা সময়ের জন্য চুক্তি করে ফেললেও তা যে পুরোপুরি বিতর্কমুক্ত থাকতে পারবে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না!

এবিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড এখনও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। তারা বিদ্যুৎ দিতে দেরি করতে পারে।’

দেরি হলে বাংলাদেশের পক্ষে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে? জানতে  চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বলেন, ‘দেরি হলে এলডি (লিকুডেটেড ডেমেজ, বিলম্বের কারণে জরিমানা) দিতে হবে।’

দীর্ঘ মেয়াদের এই চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম একই থাকবে কিনা জানতে চাইলে ড.  কায়কাউস  বলেন, ‘কয়লার দামের ওপর নির্ভর করবে। কয়লার দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। কয়লার দাম কমলে বিদ্যুতের দামও কমবে।’