স্টাফ করেসপন্ডেন্ট : পিতার মৃত্যুর শোক না কাটতেই একমাত্র বড় ভাই সুভাষ সাহাকে ঠকাতে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ১০ নং বি,দাস,রোডস্থ সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহার সরকারী সম্পত্তির লীজ নিজের নামে নিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন ছোট ভাই শংকর সাহা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদনপত্রে কড়িৎকর্মা শংকর সাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাবার নামে নেয়া সরকারি সম্পত্তির লীজ এককভাবে নিজের নামে হাতিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে না পারায় সেসময় শংকর সাহার সেই চেষ্টা ব্যার্থ হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মেসার্স সাহা এন্ড কোং এর সত্বাধিকারী স্বনামধন্য যৌথ পরিবারের (সুভাষ সাহা ও শংকর সাহা) অভিবাবক সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহা ১৯৯৪ সালের ১১ মার্চ মৃত্যুর পর কনিষ্ঠ ছেলে শংকর সাহা নীতি বিবর্জিত অসৎ কর্মটি করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহার মৃত্যুর মাত্র ২ মাস ২০ দিনের মাথায় বিগত ০৪.০৬.১৯৯৪ ইং তারিখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে এক আবেদনপত্রে শংকর সাহা লিখেন,“জনাব, স্মারক নং-৫৪ এপি- বাম - ২ / ৮৬ তাং- ২৬.০৫.১৯৯৪ ইং মোতাবেক আরজ এই যে, ১০ নং বি, দাস, রোডস্থ (দক্ষিণের কামড়া) দোকান ঘরটি আমি একসনা লীজ গ্রহীতা হিসেবে ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি।
এমতাবস্থায়, বর্নিত দোকান ঘরটি বাংলা ১৪০০ ও ১৪০১ সনের জন্য লীজ নবায়নের আদেশ দিতে আপনার সদয় মর্জি হয়। বিনীত নিবেদক, মেসার্স সাহা এন্ড কোং পক্ষে- শংকর সাহা , পিতা মৃত (সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহা), ১০ নং বি,দাস,রোড, নারায়ণগঞ্জ।” প্রতিউত্তরে “বিগত ২৯.০৬.১৯৯৪ ইং তারিখে যার স্মরক নং-০ ৬৯-এপি/বাম-২/৮৬ বরাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত এক পত্রে আবেদনটি খারিজ করে জানান, “ প্রতি: জনাব শংকর সাহা, পিতা মৃত-সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ১০ নং বি,দাস,রোড, নারায়ণগঞ্জ। বিষয়: ১০ নং বি,দাস,রোডস্থ পরিত্যক্ত দোকন ঘরের দক্ষিণের কামরা ইজারা নবায়নের আবেদন প্রসঙ্গে। ১০ নং বি,দাস,রোডস্থ পরিত্যক্ত দোকান ঘরের দক্ষিণের কামরার ইজারা নবায়নের জন্য আপনার একখানা আবেদন অত্র অফিসে পাওয়া যায়। যেহেতু আপনার নামে উক্ত দোকান ঘর ইজারা দেওয়া হয় নাই সেহেতু আপনার নামে নবায়ন দেওয়ার সুযোগ নাই। প্রেরক- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), নারায়ণগঞ্জ, তাং-২৭.৬.৯৪ ইং”
পরবর্তীকালে ২৮.০৬.১৯৯৪ ইং তারিখে পিতা: মৃত; মৃত সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহার ওয়ারিশমূলে দুই পুত্র যথাক্রমে সুভাষ সাহা ও শংকর সাহা যৌথভাবে লীজ হস্থান্তর ও নবায়নের জন্য আবেদন করার পর স্মারক নং এপি/বাম-২/৮৬/৭৫ ইং, তারিখ- ০৭-০৭-৯৪ ইং এর বরাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত পত্রে সুভাষ সাহা ও শংকর সাহার অনুকুলে লীজ বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তারপর থেকে একান্নভূক্ত পরিবারটি একই বাসায় অবস্থান করলেও অতি সম্প্রতি শংকর সাহা পুরনো কুটকৌশল অবলম্বন করে বড় ভাই সুভাষ সাহার লীজ বাতিল করিয়ে নিজের নামে বাগিয়ে নেন। অভিযোগে প্রকাশ, পক্ষপাতমূলক ও গোপন তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে গত ২৫.০৬.১৫ ইং তারিখে সুভাষ সাহার ২১ বছরের লীজ বাতিল করে সেই দোকান ঘরটি কড়িৎকর্মা শংকর সাহাকে হস্তান্তর করেন।
আরো উল্লেখ্য, লিজি সুভাষ সাহার গত ০৭.০৯.২০১৪ ইং তারিখের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছর ২০১৫ এর জুন মাসে এসি ল্যান্ড অফিসের দুইজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত টিম সরেজমিনে দোকান ঘরটি দেখেন ও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীগণের বক্তব্য নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ডিসি অফিসে জমা দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সর্বশেষ এই তদন্ত প্রতিবেদনটি পাশ কাটিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা ২০১৩ সালের একপেশে গোপন তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সুভাষ সাহার লীজ বাতিল করে তা বিতর্কিত শংকর সাহাকে দিয়ে দেন। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে জেলা প্রশাসনের এমন বিমাতাসূলভ আচরনের নজির বিরল বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিসি অফিসেরই একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, শংকর সাহার বিরূদ্ধে ডিসি’র কণ্ঠ নকল করে বড় ভাই সুভাষ সাহাকে অপদস্ত করার প্রয়াস চালানোর ঘটনা নিয়ে সম্প্রতিএকটি প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শহরে তোলপাড় শুরু হয়।