ঢাকা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৭:১০:৩৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

লিভ মঞ্জুর : খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

| ২৩ চৈত্র ১৪২৪ | Friday, April 6, 2018

লিভ মঞ্জুর : খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষে আনা লিভ মঞ্জুর করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

দু’সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক এবং আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আপিলের শুনানির জন্য ৮ মে তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল আবেদন (আপিল দায়েরে আবেদন) মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
গতকাল (রোববার) লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ সোমবার বিষয়টির ওপর আদেশ দেয়ার দিন ধার্য ছিল। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।
লিভ টু আপিল শুনানিতে দুদকের পক্ষে এডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, সাজার মেয়াদ, জামিনের অপব্যবহার না করা, বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা এবং পেপারবুক প্রস্তুতের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য আইনের একটি মামলায় ইতোপূর্বে আপিল বিভাগ দুই বছরের দন্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে জামিন দেয়নি। এ যুক্তি দেয়ার পরেও হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। তিনি জামিন স্থগিতে বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করে বলেন, বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার সামাজিক অবস্থান ও বয়স কনসিডার করে সাজা কম দিয়েছেন বলে রায়ে উল্লেখ করেন। জামিন স্থগিতের যুক্তিতে তিনি আরো বলেন, একজন আসামীকে বারবার কনসিডার করার সূযোগ নেই।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারকে নস্যাত করতে সকল পন্থাই আসামিপক্ষ গ্রহণ করেছেন। আসামীপক্ষ মামলাটি বাতিলসহ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে এসেছিলেন। উচ্চ আদালত সে সব আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। যার কারণে ২০০৯ সালের মামলা চলতি বছরে এসে বিচার শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, আপিল শুনানির পূর্বেই যদি নিম্ন আদালতের সাজা আসামি ভোগ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে তখনই জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে যে বিবেচনায় জামিন দিয়েছে তা সঠিক হয়নি।
এটর্নি জেনারেল বলেন, যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয় তাহলে আপিল শুনানি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাইকোর্ট কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আপিলকারীকে জামিন দিয়েছেন। এতে আপিল বিভাগের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। তবে যেসব মামলায় জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যুক্তি তুলে ধরেনি সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্র্টের দেয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার ১৩ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে প্রেরণ করে। গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত করে সংশ্লিষ্টদের লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলে। গত ১৫ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দাখিল করে। অপরদিকে জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ সোমবার চার মাসের জামিন দিয়ে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে-বেগম খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর যেকোনো পক্ষ চাইলে আপিল শুনানির জন্য আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করতে পারবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া আদেশে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নি¤œ আদালতের নথি আসার পর এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ (এডমিট) করে হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার দন্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। পাশাপশি নিম্ন আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১১ মার্চ রোববার এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি উচ্চ আদালতে পৌঁছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার আপিল দায়ের (ত্রিমিনাল আপিল নং: ১৬৭৬/২০১৮) করা হয়। আপিল আবেদনে নিম্ন আদালতের পাঁচ বছরের দন্ড থেকে খালাস চেয়ে বিভিন্ন যুক্তি দেখানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য সিনিয়র এডভোকেট আব্দুর রেজাক খান ফাইলিং ল’ইয়ার হিসেবে এ আপিল মামলা দায়ের করেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে রায়ের অনুলিপি ১১৬৮ পৃষ্ঠা ও আদেশ ৬ পৃষ্ঠাসহ মোট ১১৭৪ ফোলিও প্রিন্ট দেয়া হয়। প্রকাশিত এ রায়ের পর্যবেক্ষনে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তার জ্যেষ্ঠ পূত্র দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয়। সাজার রায় ঘোষণার পরপরই রাজধানীর পূরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে সাজাভোগ করছেন খালেদা জিয়া।