ঢাকা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২১:৫৩:২৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

লাইসেন্স ছাড়াই রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ৭৫ হাজার চালক

| ২১ আষাঢ় ১৪২৯ | Tuesday, July 5, 2022

[গ্রাফিক্স: ইত্তেফাক]

 

লাইসেন্স ছাড়াই রাজধানীতে লাখ লাখ গাড়ি চলছে। শহর ও শহরতলির প্রায় ২০০ রুটে চলাচলকারী বাসের বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। বিনা লাইসেন্সে বিআরটিএ ও পুলিশের নাকের ডগায় তারা হরদম বাস চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে ধরা পড়লেও ঘুষ দিয়ে চালক রক্ষা পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে বিনা লাইসেন্সের বাসচালককে আটক করে কারাগারে পাঠালে এক-দুই মাস পর বেরিয়ে আবারও তারা পুরোনো পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। এদের হাতেই ঘটছে ভয়ংকর দুর্ঘটনা। লাইসেন্স বাতিলের দায়বদ্ধতা নেই বলে এরা সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। কখনো কখনো দুই বাসের পাল্লা দিতে গিয়েও ঝরছে প্রাণ।

গত ২ জুলাই রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে কৃষক জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫) নিহতের ঘটনায় বাসচালক আল আমিনকে (৩২) রবিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। চার বছর বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করার পর আল আমিন হাত রাখেন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে। ২০১৭ সাল থেকে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই বাস চালানো শুরু করেন।

 

বেসরকারি পরিসংখ্যানমতে, সারা দেশে যানবাহনের নিয়মিত-অনিয়মিত চালকের সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। এর মধ্যে বিআরটিএর লাইসেন্স আছে ২০ লাখেরও কম। অবশিষ্ট প্রায় ৫০ লাখ চালক অবৈধ ও অদক্ষ। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে চলাচল করা বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলারসহ মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। এর বিপরীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছেন প্রায় ২০ লাখ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ২০ লাখ নিবন্ধিত মোটরযানের বিপরীতে চালক রয়েছেন মাত্র ১৪ লাখ। একইভাবে লক্ষাধিক ভারী মোটরযানের বিপরীতে এগুলোর লাইসেন্সধারী চালক রয়েছেন মাত্র ২৩ হাজার। অর্থাৎ, ৭৫ হাজার লাইসেন্সবিহীন চালক রাজধানীতে গণপরিবহনগুলোর স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে সাড়ে ৫ লাখ হালকা মোটরযানের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ৪ লাখের সামান্য বেশি।

 

বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বলেন, ‘বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালনার অপরাধে পুলিশের হাতে আল আমিন আগে একবার আটক হয়েছিলেন। শাস্তি শেষ হওয়ার পর তিনি আবারও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসেন। আসলে যারা গাড়ির মালিক, তাদের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। কারণ লাখ লাখ টাকায় একটা বাস কিনে আমি অদক্ষ ও বিনা লাইসেন্সের চালকের হাতে কেন তুলে দেব? গাড়ির মালিকদের দায়িত্ব হচ্ছে সঠিক চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া।’ মনিবুর রহমান জানান, রাজধানীর যেসব এলাকা দিয়ে গণপরিবহন প্রবেশ করে ও বের হয়, বিশেষ করে মিরপুর, ওয়ারী, মতিঝিল ও উত্তরা এলাকায় ট্রাফিক বিভাগের পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সব সময় মনিটরিং করে থাকেন। তারা গাড়ির মালিক, চালক, শ্রমিক, হেলপার, শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় সময়ই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান।

রাজধানীতে সড়কে নৈরাজ্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুই বাসের রেষারেষির বলি হয়েছিল দুই শিক্ষার্থী মিম ও রাজু। এ ঘটনার জন্য দায়ী দুই বাসচালকেরও ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। বাসগুলোরও ছিল না ফিটনেস। তখন সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে প্রায় সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে। আন্দোলনের মুখে তাত্ক্ষণিকভাবে সরকারসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং পরিবহন মালিক-চালকদের টনক নড়ে। অনুসন্ধানে পরিবহন খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, বে-আইনি কর্মকাণ্ডের তথ্য বেরিয়ে আসে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এর জন্য দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব। চালকের ধৈর্যের অভাব, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও ক্লান্তি দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন চালকের দিনে ৮ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর নিয়ম থাকলেও চালান ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে বা বেশি যাত্রীর আশায় বা অধিক ট্রিপ দেওয়ার আশায় চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান এবং অন্য গাড়ির সঙ্গে রেষারেষিতে লিপ্ত হন। বাসমালিকেরা দৈনিক চুক্তিতে চালকের হাতে ভাড়ায় বাস দিয়ে দেন। চালক লাভ করার জন্য অল্প সময়ে বেশি আয় করতে চান। ফলে বেপরোয়া গাড়ি চালনা আর গাড়িতে গাড়িতে রেষারেষি দেখা যায় সড়কে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানোর শক্তি ধরে রাখতে অনেক চালক মাদক নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গুলিস্তানে দুই বাসের রেষারেষিতে কৃষক নিহতের ঘটনায় র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতারকৃত বাসচালক আল আমিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার ড্রাইভিংয়ের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। গাড়ির হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে ড্রাইভিং শিখেছেন। ট্রাফিক নিয়মাবলি সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানও নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চালক গাড়ি চালনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন, তখনই গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং নিরীহ পথচারীর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে গণপরিবহনের ৭০ শতাংশ গাড়ির চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই। এখানে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে চাঁদাবাজির কারণে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা বেশি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। একটি বাস রাস্তায় চালাতে গেলে দিনে গড়ে বিভিন্ন সেক্টরে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এখানে বাসমালিকেরা তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। আবার চালকের লাইসেন্স আছে কি না, রুট পারমিট, ফিটনেস যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব বিআরটিএ ও পুলিশের। এ দুই সংস্থা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না।