ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৩:২৬:৫১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

রোহিঙ্গা শরণার্থী তিন লাখ ছাড়াবে, খাদ্য জরুরি

| ২৩ ভাদ্র ১৪২৪ | Thursday, September 7, 2017

 

ছবি : রয়টার্স

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন আর ধর্ষণের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বিপদসঙ্কুল পথ পাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল থামছেই না; এ সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ।

কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন উপজেলার শরণার্থী ক্যাম্প, জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি করা খোলা জায়গায় ঠাঁই পাওয়া এসব রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। সেসব সংস্থার কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, যারা শরণার্থী হিসেবে এখানে আসছে তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যের প্রয়োজন।

যদিও সংখ্যা এভাবে নির্ধারণ করা কঠিন তবু জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত ১২ দিনে এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখানে যারা শরণার্থী হিসেবে আসছে, তাদের অধিকাংশই পুষ্টিহীনতার সমস্যায় ভুগছে। এক মাস ধরে তাদের স্বাভাবিক খাবারের উৎস্য বন্ধ ছিল। সত্যিকার অর্থে তারা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত তো বটেই, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত।’

শরণার্থীদের যে ঢেউ বাংলাদেশে আছড়ে পড়ছে, তাদের মধ্যে অনেকে অসুস্থ ও দুর্বল, এর মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষ এরই মধ্যে কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সাহায্য পেয়েছে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা কোথাও আশ্রয় না পেয়ে এখনো খোলা আকাশের নিচে আছে, তাদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণের ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে।

দীপায়ন ভট্টাচার্য জানান, এখন বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় করে নীদ পাড় হয়ে বাংলাদেশে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডব্লিউএফপি মুখপাত্র আরো বলেন, ‘যদি তাঁরা দ্রুত এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তাহলে এসব মানুষ খাদ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করবে- এমন পরিস্থিতি আমাদেরকে হয়তো দেখতে হবে। এর ফলে সেখানে নানা অপরাধ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা জন্ম নেবে।’

ওই এলাকায় কাজ করা জাতিসংঘের আরেক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘নির্মূল অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে। এর শিকার হয়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যাদের একটি বড় অংশ উপকূলের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার কক্সবাজার, পার্বত্য তিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েও পড়েছে।

এই বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থানের মাঝেই গত বছরের অক্টোবরে আবার নতুন করে সহিংসতা দেখা দেয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। তখন আরো প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। এবার ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করল। অর্থাৎ গত ১১ মাসে বাংলাদেশে সোয়া দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। প্রতি দিনই এ সংখ্যা বাড়ছে।

গত অক্টোবরের পর থেকেই বালুখালীর অনিবন্ধিত শরণার্থীর ক্যাম্প বাইরের দিকে নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। এখন সেখানেই রাস্তার পাশের মাটি কেটে বাঁশ দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচার মতো ছাউনি তৈরির চেষ্টা করছেন নতুন করে রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।  এ ধরনের নির্যাতন বন্ধের জন্য মিয়ানমারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।

মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ছয়শ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।