ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০২:২০:৪৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

রক্তমাখা জামা আর ই-মেইল ঘিরে তদন্ত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

| ২৬ শ্রাবণ ১৪২২ | Monday, August 10, 2015

ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় নীলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহভাজন কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজনকে ঘিরে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা জামা আর হত্যার দায় স্বীকার করে ই-মেইল বার্তার সূত্র ধরে এগোচ্ছে তদন্ত। নিলয়কে হত্যার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হয়েছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ই-মেইল প্রেরণকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এদিকে, গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিলয় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) দলের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন ডিবির কর্মকর্র্তারা।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্লগে ও ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে নানা ধরনের লেখালেখির কারণে সংক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তাকে হত্যা করতে পারে। হত্যার ধরন থেকে মনে হচ্ছে, আগে খুন হওয়া ব্লগারদের হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উগ্র গোষ্ঠী নিলয় হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে যত ধরনের কারণ থাকতে পারে, এর সবকিছুই মাথায় নিয়ে তদন্তকাজ চলছে।
শুক্রবার দিনদুপুরে রাজধানীর পূর্ব গোড়ানের ভাড়া বাসায় নীলাদ্রি চ্যাটার্জিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় বাসায় তার স্ত্রী আশামনি ও শ্যালিকা উপস্থিত থাকলেও তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। নিলয়ের স্বজন ও বন্ধুরা বলে আসছেন, ব্লগে ধর্মীয় গোড়ামির বিপক্ষে মুক্তমত প্রকাশ করতেন নিলয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিভিন্ন সময় খুন হওয়া ব্লগারদের বিচারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। এসব কারণে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা। এ নিয়ে থানায় নিরাপত্তা চেয়েও তিনি পাননি। শেষ সময়ে অনেকটা পালিয়ে বেড়াতেন নিলয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, নিলয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপাতত থানা পুলিশ তদন্ত করলেও প্রযুক্তিগত তদন্ত সহায়তা দিচ্ছে ডিবি পুলিশ। তদন্তে অনেক অগ্রসর হওয়া গেছে।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সমকালকে বলেন, হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, উগ্র জঙ্গিদের হাতে নিলয় খুন হয়েছেন। র‌্যাব খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে ডিবি পুলিশের পূর্ব জোনের উপকমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা যে জামা উদ্ধার হয়েছে, সেটি হত্যাকারীদের একজনের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হত্যার দায় স্বীকার করে পাঠানো মেইলটিও বাংলাদেশ থেকেই পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে যত আলামত পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে।
রক্তমাখা জামা আর ই-মেইল বার্তা ঘিরে এগোচ্ছে তদন্ত :নিলয়কে হত্যার পর খুনিরা বাসার নিচে রক্তমাখা যে জামা, গামছা আর পানির বোতল রেখে গিয়েছিল, সেগুলোই এখন তদন্ত এগিয়ে নিতে কর্মকর্তাদের কাজে বড় আলামত। ল্যাবে এসব আলামত পরীক্ষার পাশাপাশি এগুলো ঘিরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জামাটি যে একজন খুনির, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেই খুনিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডস্থলের আশপাশের কোনো ভবনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে কি-না, তার অনুসন্ধান চলছে। তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, ওই এলাকার কোনো সিসি ক্যামেরায় খুনিদের চলাফেরা ধরা পড়তে পারে। ফুটেজে উদ্ধার করা জামাটি মিললেই খুনিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ই-মেইল বার্তাটি যেহেতু বাংলাদেশ থেকেই পাঠানো হয়েছে, এর প্রেরককে শনাক্ত করা গেলেও খুনিদের শনাক্ত করা সহজ হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা সেদিকেই হাঁটছেন। গতকাল আদালতের অনুমতি নিয়ে রক্তমাখা জামা ও গামছা এবং নিলয়ের দাঁত থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ নমুনা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, নিলয়ের স্ত্রী বলেছেন, খুনিদের একজন বাসায় ফোন ব্যবহার করেছে। ফলে ওই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া নিলয়, তার স্ত্রী ও বন্ধুদের কয়েকজনের ফোন রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে।
এফবিআই-ডিবি বৈঠক :গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে এফবিআইয়ের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল যায়। তারা ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সময় ডিবি পুলিশের তিন উপকমিশনার এবং মতিঝিল জোনের উপকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে এফবিআই প্রতিনিধিরা ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। তারা গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেননি। পরে ডিবির উপকমিশনার মাহবুব আলম জানান, অভিজিৎ হত্যাকা ের তদন্ত-সংক্রান্ত বিষয়ে এফবিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল। এ বৈঠকেই এফবিআই কর্মকর্তারা নিলয় হত্যাকা সম্পর্কেও জানতে চেয়ে মামলার তদন্তে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরাও কোন কোন বিষয়ে এফবিআইর সহযোগিতা নিতে পারি, সেগুলো চিহ্নিত করেছি। মামলা চলাকালে সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে কারিগরি ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়া হবে।’
মামলা যাচ্ছে ডিবিতে :নিলয়কে হত্যার পর শুক্রবার মধ্যরাতে তার স্ত্রী খিলগাঁও থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। খিলগাঁও থানা পুলিশ মামলার তদন্ত করলেও ডিবি-র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ছায়াতদন্ত করে আসছিল। তবে আজ-কালের মধ্যেই মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশে ন্যস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পারিবারিক শ্মশানে নিলয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন :পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, নিলয়ের মরদেহ শনিবার রাত সোয়া ১০টায় পুলিশ পাহারায় তার নিজ বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামে আনা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাতে পারিবারিক শ্মশানে তার শেষকৃত্য হয়।