ঢাবি : আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘আমাদের ধর্মান্ধতায় থাকলে চলবে না। এই দেশ সকলের জন্য। সকলের কথা শুনতে হবে। এখানে সকলেই যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। এমনকি যিনি ধর্ম মানেন না, দেশটা কিন্তু তারও। মহান আল্লাহ কিন্তু তাকেও খাওয়াচ্ছেন-পরাচ্ছেন। সেকথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।’
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। পরে জাতীয় সঙ্গীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, উদ্বোধনী সঙ্গীত ও শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সম্মেলনে দেশের ৫৮টি জেলা, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের ৬৮টি কমিটির ৭০০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব.) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবীব, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এ এফ এম মেজবাহ উদ্দীন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইক্বরা সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবু ওসমান চৌধুরী, ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ প্রমুখ।
এবি এম খায়রুল হক বলেন, শুধু যুদ্ধাপরাধী নয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেকোনো অপরাধীরই শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেই এটা বিবেচনা করি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনও চলমান। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা শুধু বই বা সংবিধানেই রয়ে গেছে। তার বাস্তবায়ন আমাদের করতেই হবে।’
তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছেন, চার লাখ মা বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন সেই শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের ধর্মান্ধতায় থাকলে হবে না। এই দেশ সকলের জন্য। সকলের কথা শুনতে হবে। এখানে সকলেই যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। এমনকি যিনি ধর্ম মানেন না, দেশটি কিন্তু তারও। মহান আল্লাহ কিন্তু তাকেও খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন। এসব বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে।’
এবি এম খায়রুল হক বলেন, ‘ ১৬ ডিসেম্বর যে জায়গায় পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জায়গাটি সংরক্ষণের রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেখানে স্বাধীনতা চত্ত্বর তৈরি করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টের সে রায়টি এখনও বাস্তবায়ন করেনি। আপনারা মুক্তিযোদ্ধারা কাজটি বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে যখন পারে তখনই বাঙালি জাতিকে ছোটো করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঙালিরাই দুইটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান কিন্তু বাঙালিরাই সৃষ্টি করেছিলো যা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। পরবর্তীকালে এই জাতি তৈরি করেছে বাংলাদেশ।’
সাবেক এই প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হবে বাংলাদেশ। তখনো কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি তার মনে কি কাজ করছিলো। তিনি তখন থেকেই দেশকে স্বাধীন করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। এখানেই একজন রাজনীতিবিদ ও স্টেটসম্যানের মধ্যে পার্থক্য। একজন রাজনীতিবিদ জনগণের বক্তব্যকে তুলে ধরেন। আর একজন স্টেটসম্যান তার মতকে জনগণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন। নিজের মতাদর্শকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাঙালি জাতির আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি থাকার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুই আমাদের শিখিয়েছেন। এ কারণেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।’
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেক্টর কামান্ডার মেজর জেনারেল(অব.) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কমিটির সভাপতিমন্ডলীতে রয়েছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীর উত্তম, লে. কর্ণেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। লেখক ও সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব আবারও মহাসচিব নির্বাচিত হন।