ঢাকা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২১:১৪:২৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮-ই থাকবে

| ১৫ শ্রাবণ ১৪২২ | Thursday, July 30, 2015

 

বাল্যবিয়ের কারণে কন্যাশিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এর পরিণতিতে শুধু শিশুটি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবারটি। শুধু তাই নয়, বাল্যবিয়ের প্রথম শিকার শিশু, দ্বিতীয় নারী ও তৃতীয় পুরো সমাজব্যবস্থা। বাল্যবিয়ের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোনো শর্ত ছাড়াই মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর বলবৎ রাখতে হবে।

রাজধানীর গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, দেশের গরিব শ্রেণি তো বটেই, ধনিকদের মধ্যেও ৫৩ শতাংশ নারী বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। এটা বাল্যবিয়ের ভয়াবহতার চিত্রই তুলে ধরে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করণীয়বিষয়ক মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগ। সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি), ধর্মীয় নেতারা, নারী আন্দোলন ও মানবাধিকার সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী। সভাপ্রধান ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মাদ মুসা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ডাইভারসিটি অ্যান্ড মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক শীপা হাফিজা।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে নোটারি পাবলিকের এফিডেভিট বাতিল করা হবে। আর বিয়ের ক্ষেত্রে নোটারি পাবলিকের কোনো জন্মসনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। আর মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর ছিল, তা-ই থাকবে। এর কোনো নড়চড় হবে না। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার নারীবান্ধব সরকার। নারীর ক্ষমতায়নকে এই সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এই সরকারের আমলে নারীবিরোধী কোনো আইন হবে না, হতে পারে না।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শীপা হাফিজা বলেন, ‘দেশের প্রতি তিনটি বিয়ের দুটিতেই কনের বয়স ১৮ বছরের কম। প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ২৯ শতাংশই বিবাহিত। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ধনীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী বাল্যবিয়ের শিকার। আর গরিবদের ক্ষেত্রে এই হার ৮০ শতাংশ।’

শীপা হাফিজা বলেন, ‘দেশের ৮৬ শতাংশ নিরক্ষর নারীর বিয়ের বয়স ১৮ বছরের কম। মাধ্যমিক স্তরে ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে ঝরে পড়ে। একই কারণে ৭৫ শতাংশ মেয়ের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই হার গ্রামে ৮০ ভাগ ও শহরে ৬১ ভাগ। ৬২ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের কারণে সরকারি বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়।’

বাল্যবিয়ে রোধে ব্র্যাকের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন শীপা হাফিজা। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৯টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নিকাহ রেজিস্ট্রার, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মোট এক হাজার ২৯৪ জন ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদেরকে বাল্যবিয়ে রোধে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজে লাগানো হয়েছে। এতে বাল্যবিয়ে আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে এসেছে।’

সভাপ্রধানের বক্তব্যে ড. মুহাম্মাদ মুসা বলেন, ‘আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ ও পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলেই কেবল বাল্যবিয়ে নির্মূল করা সম্ভব হবে।’

মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, জাতিসংঘ সিডও কমিটির সাবেক সভাপতি সালমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, উইমেন ফর উইমেনের সভাপতি জাকিয়া হাসান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সারাহ কুক প্রমুখ।