ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ০৫:১১:১১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী ফোর্বসের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনা ৪৬তম বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র করছে : ওবায়দুল কাদের

মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যায় দেশজুড়ে তোলপাড়,আত্মহত্যা করার কারণ উল্লেখ

| ২৫ আষাঢ় ১৪২২ | Thursday, July 9, 2015

কেন আত্মহত্যা করেছেন? কারণটা স্পষ্ট করেই লিখে রেখে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান। সুইসাইড নোটে (মৃত্যুর আগে লেখা চিরকুট)

আত্মহত্যা করার যে কারণ উল্লেখ করে গেছেন তিনি, তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাদানকারী’ বলে অভিযুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে গ্রেফতার এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিও জানানো হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব (প্রশাসন) এমদাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহননে প্ররোচনাকারী সচিবের শাস্তি দাবি করে বলা হয়, ‘শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার গালমন্দ, মানসিক নির্যাতন ও অপমান সহ্য করতে না পেরে দেশের সূর্যসন্তান আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, যা স্বাধীন দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাম্য ছিল না।’
অবশ্য সচিব এম এ হান্নান লিখিত প্রতিবাদে দাবি করেছেন, ‘তিনি (আইয়ুব খান) আমার পূর্বপরিচিত নন এবং তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই এবং সে কারণে ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকারও প্রশ্ন ওঠে না।’
আইয়ুব খান সুইসাইড নোটে ঢাকায় তাকে দাফন করার কথা লিখে রেখে গেলেও সন্তানদের ইচ্ছায় গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ মরফলা গ্রামে দাফন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি রাজধানীর তোপখানা রোডে হোটেল কর্ণফুলী ইন্টারন্যাশনালের ২০৪ নম্বর কক্ষে কীটনাশক পান করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুইসাইড নোটে আইয়ুব খান লিখে রেখে গেছেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট কমান্ড ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে দু’বার মাছ, শুঁটকি ও টাকা দিয়েছি। ৬ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কিছুই করেননি। তার বাসায় গিয়ে আমার দেওয়া টাকা চাইলে আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আমাকে অপমানিত করে। এই বিচারের ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর দিয়ে বিদায় নিলাম’ বলে তিনি নোটটি শেষ করে স্বাক্ষর করেন। তবে সচিব এম এ হান্নানের প্রতিবাদে দাবি করা হয়েছে, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে যে বিষয়টি বলা হয়েছে তাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো সশ্লিষ্টতা নেই, বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের এখতিয়ারাধীন।’ প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত কাজটি যেহেতু এ মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে না বা এটি ব্যক্তিবিশেষের কোনো কাজও নয়, সেহেতু এই কাজে সচিবের বাসায় যাওয়া কোনো মতেই বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দুই নেতা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব কালী নারায়ণ লোদ সচিবের এ দাবি মানতে নারাজ। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আত্মহত্যা করার আগে একজন মুক্তিযোদ্ধা মিথ্যাচার করে গেছেন বলে দাবি করছেন যারা, তারা তাদের অপরাধের মাত্রা বাড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তাদের নিবন্ধিত হতে হবে। জামুকার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪ নম্বরে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল। জামুকা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান, সেহেতু জামুকার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কমান্ড কাউন্সিলকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
কালী নারায়ণ লোদ বলেন, এক সময় চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তিনটি ইউনিট ছিল, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম মহানগর। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে চট্টগ্রামে এ তিনটি ইউনিটের পরিবর্তে কমান্ড কাউন্সিলের একটি শাখা করা হয়। শুধু আইয়ুব খান একা নন, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের আরও অনেকেই তিনটি ইউনিট চেয়ে দেনদরবার, এমনকি মামলা মোকদ্দমা করেছেন।’
চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতন্ত্র ইউনিট গঠন করতে একটি মামলা করেছিলেন সাতকানিয়ার আইয়ুব। সে মামলায় আদালত তার পক্ষে রায় দেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিলেড ডিভিশন আমাদের এ আবেদন খারিজ করে আগের রায় পুনর্বহাল রাখেন।’ একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরে আলাদা ইউনিট গঠন করতে আইয়ুবের আবেদনে সুপারিশ করেছিলাম আমরা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় আদালতের রায় মেনে দক্ষিণ জেলায় স্বতন্ত্র ইউনিট করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। বেঁচে নেই আইয়ুব খানও।’
যা লেখা আছে সুইসাইড নোটে :মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান সুইসাইড নোটটি ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখেছিলেন। সাদা কাগজে চার পৃষ্ঠার নোটে পুরো তিন পৃষ্ঠা লেখা থাকলেও শেষ পৃষ্ঠায় মাত্র কয়েক লাইন রয়েছে। সেখানে তিনি নিজে স্বাক্ষর ও সিল দিয়েছেন।
সুইসাইড নোটের দ্বিতীয় প্যারায় লেখা রয়েছে, ‘আমাকে অপমানিত করে বের করে দিলে আমি হোটেল কর্ণফুলীর ২০৪ নম্বর রুমে আত্মহত্যা করলাম। আমার লাশটা ঢাকায় দাফন করবেন। এই আমার শেষ অনুরোধ।’ একই বিষয়ে একাধিকবার লেখা রয়েছে ওই চিরকুটে। তাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের উদ্দেশে লেখা রয়েছে, ‘আমার মরদেহ ঢাকায় দাফন করবেন। চট্টগ্রামে পাঠাবেন না।’ নিজের পরিবার নিয়ে লিখেছেন, ‘আমার পরিবারের জন্য এক কেজি চালও দিয়ে যেতে পারলাম না। অপমানের চেহারা নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে চাই না।’
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমান্ড ইউনিট ঘোষণার জন্য আইয়ুব খান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন বলে চিরকুটে উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশের কথায় অপমৃত্যু মামলা :হোটেল কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সুইসাইড নোটও উদ্ধার করে। তাতে আত্মহত্যার জন্যও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকেই দায়ী করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান। সেই নোট পড়ে স্বজনরা সচিবের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলাও করতে চেয়েছিলেন। তবে শাহবাগ থানা পুলিশের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যাকে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নিয়েছে পুলিশ। অপমৃত্যু মামলার বাদী হয়েছেন নিহতের মামাতো ভাই আমির হোসেন।
আমির হোসেন বলেন, পুলিশ তাকে সুইসাইড নোট দেখালে সেটি যে আইয়ুবের হাতের লেখা তা নিশ্চিত করেন। ওই সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান। তবে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দিতে বলে। তিনি বাধ্য হয়ে অপমৃত্যু মামলা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, কক্ষ থেকে যে সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে_ সেটি তার হাতের লেখা কি-না তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এরপরই কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা নেওয়া যায়। তাছাড়া অপমৃত্যু মামলা তদন্তে আত্মহত্যায় প্ররোচনার প্রমাণ পাওয়া গেলে তখন সেটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি :সুইসাইড নোটে নাম থাকায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, তদন্তে কারও নাম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট যে কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সচিব যেহেতু মামলার আসামি নন, তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কিছু আইনি ধাপ পার হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, এরই মধ্যে বিষয়টি তদন্তে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত।