ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১২:৩৫:৫২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

মিয়ানমারে সহিংসতা অব্যাহত, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

| ১৩ ভাদ্র ১৪২৪ | Monday, August 28, 2017

 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা অব্যাহত আছে। গত দুদিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৪ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতার মুখে মংডু ও বুথিডং শহর থেকে বেসরকারি সংস্থার বেশ কিছু মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সঙ্গে জড়িত’ বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সরকার। জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সহিংসতাপ্রবণ এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার অমুসলিম নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সহিংসতার মুখে পালিয়ে হাজার হাজারা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মাঝখানের নাফ নদীর সীমান্ত ধরে শূন্যরেখায় বসে আছে। মিয়ানমারের দিক থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন রয়টার্সের একজন প্রতিনিধি। সেখানে থাকা ৬১ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ সেই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা এখানেই থাকতে চাই। না হলে তো আমাদের তো হত্যা করা হবে।’

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে একসঙ্গে রাজ্যের ২৪টি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা একটি সেনা আবাসেও হামলার চেষ্টা চালায়। হামলায় এক ডজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও মারা গেছেন। হামলার পর গত শুক্রবার সর্বশেষ ৭১ জনের কথা বলা হলেও গত দুদিনে নিহতের সংখ্যা আরো বেড়েছে। হামলায় জড়িতদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও ঢাকা এর প্রতিবাদ করেছে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পে হামলার দায় স্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে একটি সংগঠন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষ্য মতে, এটি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংগঠন।

মিয়ানমার থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা নারী-পুরুষরা অভিযোগ করেছেন, কালো ও সেনাবাহিনীর পোশাক অস্ত্রধারীরা পুরুষদেরকে নির্বিচারে হত্যা করছে, নারীদের উপর চালাচ্ছে নির্যাতন। হত্যা, গুম, খুন আর ধর্ষণের মুখে রাখাইল রাজ্য ছাড়ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘দেশহীন’ জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার রয়টার্স বলছে, রাখাইনের নাথাথং এলাকায় সকালে প্রায় ৮০০ ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ জড়ো হয়। সেনাবাহিনী সেখানে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

যদিও ‘বাঙালি’ শব্দটা রোহিঙ্গারা তাদের প্রতি অবমাননাকর বলে চিহ্নিত করে থাকে। আর এটা বলেই তাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের। তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যায়নি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানেই তারা বসবাস করছে বলে রোহিঙ্গাদের দাবি।

এদিকে বোধিডংয়ের এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ১০০ প্রতিনিধিকে স্পিডবোটে করে বোধিডং ত্যাগ করতে দেখেছেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) লোগোসংবলিত এক আলোকচিত্রীকে ‘সন্ত্রাসে সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে তাঁকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। যদিও ডব্লিউএফপি বলেছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে মংডু থেকে জাতিসংঘের কিছু কর্মকর্তাকেও প্রাথমিকভাবে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি।

এ বছরের শেষের দিকে মিয়ানমার পরিদর্শনের কথা রয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের। তিনি রোমে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন রোহিঙ্গাদের রক্ষা করেন। তারা যেন সেখানে পূর্ণ অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে।’ এ সময় তিনি সবাইকে রোহিঙ্গা ভাইদের জন্য প্রার্থনা করতেও বলেন।

এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে। এরপর আবার একই ধরনের হামলার তথ্য দিল মিয়ানমার সরকার।

জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।