ঢাকা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৩:৫৮:৩৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতা : বাংলাদেশে ফের রোহিঙ্গার ঢল

| ১১ ভাদ্র ১৪২৪ | Saturday, August 26, 2017

বাংলাদেশে ফের রোহিঙ্গার ঢল

মিয়ানমার থেকে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে আসা এক দল রোহিঙ্গা গতকাল আশ্রয় নেয় উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের প্যারাবনে।

নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৮৯। এর মধ্যে ৭৭ জন রোহিঙ্গা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাখাইনের ২০ থেকে ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা’ হামলা চালায় উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে নতুন করে এ সহিংসতা শুরু হয় বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়।টেকনাফের বাসিন্দারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ ভেসে আসছিল। এরপর দলে দলে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। গতকাল ভোররাতে এক হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঢুকেও পড়েছে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কিছু রোহিঙ্গাকে ঢুকতে না দিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।   টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম সীমান্তে গোলাগুলির সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকালে ১৪৬ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর মানবিক সহায়তা দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিজিবি সিও লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত অতিক্রম করে রাতে বেশ কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে।

তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি পোস্ট ও টহল বাড়ানো হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থার সদস্যরাও। ১৪৬ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে পুশব্যাক করার খবরটি দিয়ে এএফপি বলেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা তাদের বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা ছিল ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত। তাদের ফেরত পাঠানোর সময় আমাদেরও খারাপ লাগছিল। ’৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনঞ্জুরুল হাসান খান বলেছেন, সীমান্তে বিজিবি অনেক বিজিপিকে প্রতিহত করেছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে কুতুপালং ও বালুখালী বস্তিতে অবস্থান নিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। বিজিবির সূত্র জানায়, তাদের সতর্কতার কারণে ঢুকতে না পেরে সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজারের অধিক রোহিঙ্গা।

রাখাইনের মংডু ও বুথিদাউং এলাকার বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে সমন্বিত এই হামলার সূচনা হয় বলে গতকাল মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, রাখাইনে ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের গঠিত জঙ্গিগোষ্ঠী এআরএসএ (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) হামলার দায় স্বীকার করেছে। গ্রুপটির নেতা আতা উল্লাহ বলেছেন, শত শত তরুণ রোহিঙ্গা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ন্যায্য প্রতিরোধ তারা চালিয়ে যাবে বলছে গ্রুপটি। একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করে বলা হয়, ‘বার্মিজ নির্যাতনকারী বাহিনী গত কয়েক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ২৫টির বেশি জায়গায় আমরা প্রতিরোধ কার্যক্রম চালিয়েছি। শিগগির আরো আসছে। ’ এ ছাড়া আরাকান রাজ্যের উগ্রপন্থী ‘হরকত আল ইয়াকিন’ নামের একটি জঙ্গি রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপও গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে তাদের অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করতে বলেছিল। অন্যথায় হামলা হবে বলেও তারা হুমকি দেয়।

স্থানীয় সূত্র মতে, গত বৃস্পতিবার রাতের হামলার পর গুলির শব্দে বাংলাদেশ সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার সীমান্তের বাসিন্দারাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। কঠোর সীমান্ত পাহারার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে কমপক্ষে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নাফ নদ পাড়ি দিয়ে ঢুকে যায় বাংলাদেশে।

মিয়ানমারের মংডু বলিবাজার এলাকার বাসিন্দা রাজা মিয়ার ছেলে নুর আলম (২০), একই এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে শুক্কুর আলী (২৬), মোহাম্মদ আলীর ছেলে হোসেন আলী (১৮), আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২৩) ও মংডু কইয়ারবিল এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মো. নাছের (১৬) জানায়, তারা গতকাল সকালে শতাধিক নারী-পুরুষ সীমান্তের বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে তুমব্রু সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে।

তারা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা সীমান্তে আটকা পড়ে আছে বলে জানায় এসব রোহিঙ্গা। গতকাল অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নাইচডং এলাকার সৈয়দ করিমের স্ত্রী আলমাছ খাতুন (৮০) ও ছেলে সৈয়দ হোসেন ৫০ জানান, রাতে সেনাবাহিনীর লোকজন এলাকার চারপাশ থেকে গোলাগুলি ছোড়ে। এতে হতবিহ্বল হয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁদের পরিবারের সাতজন মেয়ে ও ছয়জন ছেলে সদস্যকে নিয়ে গতকাল ভোরে তাঁরা নৌকায় করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন।

টেকনাফের উলুবনিয়া, লম্বাবিল, খারাইংগ্যা ঘোনা, উখিয়ার পালংখালী এলাকা দিয়ে শত শত রোহিঙ্গাকে গতকাল ভোরে নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তের উপকূলীয় বিভিন্ন কেউড়া বনে লুকিয়ে থাকতে দেখেছে স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন রশিদ সিকদার কালের কণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এবং গতকাল ভোরে অন্তত সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নাফ নদ অতিক্রম করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই উখিয়ার কুতুপালং এলাকা দিকে চলে গেছে। সীমান্তবর্তী বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার। এ ছাড়া সকাল ৯টা পর্যন্ত উলুবনিয়া সীমান্তের ওপারে (মিয়ানমার) মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে টহল আরো জোরদার করেছেন। হারুন রশিদ জানান, ১৪৬ রোহিঙ্গাকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও তারা মিয়ানমারে পৌঁছতে পারেনি বলে জানা যায়। কারণ ওই সময় মিয়ানমার বাহিনী ওই রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ পর্যায়ে ফেরত যাওয়া ওই রোহিঙ্গারা নাফ নদের তোতার দ্বীপে অবস্থান নেয়। অপেক্ষমাণ শত শত রোহিঙ্গা সুযোগ বুঝে আবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে—এমন আশঙ্কাও করছে এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা রাতের আঁধারে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প, উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প, কুতুপালং ও বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সময়-সুযোগ বুঝে আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানাচ্ছে  এলাকাবাসী।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা কাজ করছেন। লোকালয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সীমান্তের ঘুনধুম এলাকার বাসিন্দা মো. আবছার (৪০) কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, রাত ২টা থেকেই তাঁরা গুলির শব্দ পাচ্ছিলেন মিয়ানমারের দিক থেকে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা নিয়ে আরাকানের মংডু নাইছদং এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ করিম মুঠোফোনে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান, এবার বিশেষ করে মিয়ানমারের বলিবাজার, লংডুন, নাইছদং, গদুরায়, তমবিল, ঝিমনখালী, কুইরখালী, রাবাইল্যা, কিয়ামং, ছালিপাড়া, নাইচং, নাপপোড়া, ফকিরাবাজার, বুদিডং, তমবাজার ও মংডু এলাকায় সহিংসতার মাত্রা বেশি। মিয়ানমারের রাখাইন উগ্রপন্থীরা রাখাইন প্রদেশের মুসলিম পল্লীগুলো ঘিরে রেখে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এর ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে চরম মানবেতর দিন যাপন করছে রোহিঙ্গারা।

উখিয়া উপজেলা পালংখালী ইউনিয়নের আনজিমান এলাকার বাসিন্দারা জানায়, গতকাল ভোরের দিকে এই সীমান্ত দিয়ে পাঁচ শরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। বিজিবিকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। ওই সীমান্তে শেষ রাতের দিকে গুলির শব্দে ঘুমানো যায়নি বলেও জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নৌকা না যেতে মাইকিং করা হয়েছে সেন্ট মার্টিনসে। শুক্রবার রাতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর নামে এমন প্রচারণা চালানো হয়। এমন তথ্য নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, সন্ধ্যায় সেন্ট মার্টিনসের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্লা ও হাইসসুরাতা এলাকায় ব্যাপক আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে দেখা গেছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ। এ কারণে কোনো মাছ ধরা নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনসের দক্ষিণ ও পূর্বে না যেতে বারণ করা হয়েছে।

গতকাল মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, আঞ্জিবান, ঘুনধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, ঘুনধুম জলপাতলি ও রেজু আমতলী এলাকা দিয়ে চোরাইপথে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যেও বিরাজ করছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা।

আরাকানে জঙ্গি হামলার ঘটনাটি এমন দিনেই ঘটল যেদিন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনানকে নিয়ে গঠিত আনান কমিশনের রিপোর্টটি প্রকাশ করা হলো। আর এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেছেন, ‘মিয়ানমারের আরাকান পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে। তবে সরকারি সিদ্ধান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানো হচ্ছে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ’

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতরাতে কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ পেশাজীবীরা জরুরি বৈঠক করেছেন। এতে কেউ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রোহিঙ্গা পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে এ জরুরি সভায় পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাজা শাহ আলম চৌধুরী, রেজাউল করিম, এ এইচ ইউনুছ বাঙ্গালী, মেয়র মকছুদ মিয়া, মাহমুদুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাখাইন রাজ্য নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পক্ষ থেকে এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক দিন পরই এ হামলা হলো। ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় কফি আনান কমিশন। সর্বশেষ সহিংসতার খবরে মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি উভয় পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান বলেছেন, তিনি এ হানাহানির খবরে গভীর উদ্বিগ্ন।

গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানো হয়। তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় থেকে চলমান সহিংসতার আগ পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়। চলতি মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাথেটং শহরে নতুন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করার পর থেকেই বড় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এই এলাকায় রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের সংখ্যা কয়েক লাখ।