স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্সকে শিক্ষানবিস চিকিৎসক পিটিয়ে গুরুতর আহত করায় কর্মবিরতি পালন করছে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত নার্সরা। জরুরি বিভাগের গেট অবরোধ করে নার্সদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা। হাসপাতালে আগত রোগীরা ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহত নার্সের নাম বকুল রানী দাশ (৪৫)। তিনি বর্তমানে ঐ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে রকিবুল ইসলাম সুজন নামের ঐ চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন তারা। আন্দোলনরত নার্সরা জানান, ঐ চিকিৎসকের সনদ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত নার্সরা কর্মবিরতি ঘোষণা করে হাসপাতালের সার্জারি ভবনের নিচে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত বকুল হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় গাইনি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স। একই বিভাগের শিক্ষানবিস চিকিৎসক সুজন। গতকাল বেলা দুটার দিকে এক রোগীকে স্যালাইনের ক্যানোলা দিতে নার্স বকুলকে নির্দেশ দেন ঐ চিকিৎসক। হাতের কাজ শেষ করে ক্যানোলা দেবেন বলে জানান ঐ নার্স। তাৎক্ষণিকভাবে আদেশ না মানায় ক্ষুব্ধ হন চিকিৎসক। শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। একপর্যায়ে চিকিৎসক সুজন নার্স বকুলকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে বেদম মারধর করেন। এতে বকুলের চোয়াল ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে। খবর পেয়ে অন্য নার্সরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন।
এদিকে এই খবর পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত নার্সরা কাজ বাদ দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি ভবনের নিচে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। রাত ৯টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নার্সদের বিক্ষোভ চলছিল। ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে চিকিৎসক সুজনকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়। এতেও নার্সরা নিবৃত্ত হননি। তারা তখনো বিক্ষোভ করছিলেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসক সুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। ঘটনার পরপরই হাসপাতাল ত্যাগ করায় চিকিৎসক সুজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আহত বকুল সাংবাদিকদের জানান, হাতের কাজ শেষ করে স্যালাইনের ক্যানোলা দেয়া হবে বলায় চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এদিকে বিক্ষোভরত নার্সদের পক্ষ থেকে তাদের দাবির ব্যাপারে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।