রাজধানীর ডেমরা এলাকায় ছেলে কামরুজ্জামানকে তার মায়ের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মা মরিয়ম বেগমের অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ার জের ধরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মা মরিয়ম বেগম (৪৪) ও তাঁর কথিত প্রেমিক আজিজুল হক ওরফে আজিজ (৫০), আজিজের সহযোগী তাফাজ্জল হোসেন (৬৫) ও মঞ্জুরুল ইসলাম (৫২)। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আজিজুল হক ওরফে আজিজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক মরিয়ম বেগমের। আর এ ঘটনা জেনে ছেলে মাকে বাধা দেয়। এর জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে ডেমরা-চিটাগাং রোড সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে কামরুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করে ডেমরা থানার পুলিশ। এ ঘটনায় কামরুজ্জামানের বাবা আশক আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ে করেন। একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ন্যস্ত হয়। তদন্তের একপর্যায়ে তথ্য মেলে আজিজুল হক নামে একজনের সঙ্গে মা মরিয়মের অনৈতিক সম্পর্কের কথা ছেলে কামরুজ্জামান জেনে ফেলে। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তির একপর্যায়ে ছেলে তার মাকে মারধর করে। আর সন্তানের এমন আচরণে মা মরিয়ম বেগমও বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রেমিক আজিজুলকে সঙ্গে নিয়ে ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে ফেলতে ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। যেভাবে হত্যা : ডিবি সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর মরিয়ম বেগম মোবাইল ফোনে তাঁর ছেলেকে জানান যে তিনি খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সে অনুযায়ী কামরুজ্জমান ওই রাতে ৮টার দিকে খিদমাহ হাসপাতালে যায়। পরে হাসপাতালের ভেতর থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাইরে ডেকে নিয়ে যান আজিজ। পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে কামরুজ্জামানকে ঘুমের ওষুধ মেশানো কিছু খেতে দেন আজিজ ও তাঁর সহযোগীরা। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আজিজ ও তাঁর দুই সহযোগী তোফাজ্জল ও মঞ্জুরুল শ্বাস রোধ করে কামরুজ্জামানকে হত্যা করেন। পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ড ঘটার পর লাশ উদ্ধার হলে মরিয়ম বেগম হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন। ওই সময় ছেলের লাশ দেখে বারবার মূর্ছা গিয়েছিলেন মা মরিয়ম বেগম। অথচ তদন্তে জানা যায়, সেই মরিয়ম বেগম ও তাঁর কথিত প্রেমিক আজিজসহ তাঁর সহযোগীরা কৌশলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। ডিসি মাসুদুর রহমান আরো জানান, ঘটনার পর রাতেই মরিয়ম বেগম এ কাজের জন্য কথিত প্রেমিক আজিজকে ৪০ হাজার টাকা দেন। পরে তাঁদের একে অপরের সঙ্গে অনেকবার মোবাইল ফোনে কথা হয়। একপর্যায়ে মরিয়মকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তিনি নিজে এখন অনুতপ্ত। জিজ্ঞাসাবাদে মরিয়ম বেগম গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে তিনি ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তিনি কামরুজ্জামানকে হত্যা করার জন্য আজিজুল হকের সঙ্গে এক লাখ টাকার চুক্তি করেন। এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা হত্যার পরপরই পরিশোধ করেন তিনি। এদিকে আজিজুলও জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, কামরুজ্জামানের মা মরিয়ম বেগমের পরিকল্পনায় সহযোগী তাফাজ্জল হোসেন ও মঞ্জুরুল ইসলামের সহায়তায় এক লাখ টাকার চুক্তিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। হত্যার পরপরই মরিয়ম তাঁকে ৪০ হাজার টাকা দেন। ঘটনার পর থেকে আজিজুল ও মরিয়ম মাতুয়াইল এলাকায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে।