ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৪:৪৭:৩২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

মামলার জট কমানোর লক্ষ্যে সংস্কারের উদ্যোগ প্রধান বিচারপতির

| ১৫ শ্রাবণ ১৪২২ | Thursday, July 30, 2015

 

সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন ৩০ লাখের বেশি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য বিচারপ্রক্রিয়া সংস্কারের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে হাইকোর্টসহ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

দেশে প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে গত বছর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওই সব কমিটিকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নির্দেশনা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রতিটি জেলার মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রমের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পূর্ণ সময় বিচারকদের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বেশির ভাগ জেলায় আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টার দ্বিতীয় ভাগে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা) আইনজীবীরা উপস্থিত না থাকায় বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে। সারা দেশের বিচারিক আদালতে ২৮ লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার একান্তভাবে জরুরি।

চিঠিতে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো : এক. বিচারকরা আবশ্যিকভাবে বিচারিক কর্মঘণ্টার দ্বিতীয় ভাগে বিবিধ মামলাগুলো বিশেষ করে ফৌজদারি বিবিধ মামলা ও দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে দোতরফা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনপত্রসংক্রান্ত শুনানি গ্রহণ করবেন এবং এরূপ মামলার শুনানি গ্রহণের পর অবশিষ্ট সময় থাকলে সেই সময়ও আপিল, রিভিশন ইত্যাদি মামলার শুনানি গ্রহণ করবেন। দুই. যেসব আদালতে বিবিধ মামলা বিচারাধীন নেই, সেসব আদালতে কর্মঘণ্টার দুই ভাগেই মূল মামলা, আপিল মামলা, রিভিশন মামলার শুনানি গ্রহণ করে বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করবেন। তিন. আগে জারি করা কোনো পরিপত্রের (সার্কুলার) সঙ্গে এই আদেশের কোনো নির্দেশনাবলি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে এ নির্দেশনার  বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে যখন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয় তখন সারা দেশের আদালতগুলোয় ১৫ লাখ মামলা বিচারাধীন ছিল। মাত্র সাড়ে সাত বছরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখের বেশি। এই হারে মামলা বাড়তে থাকলে বিচার বিভাগের পক্ষে এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হবে। এ কারণে মামলাজট কমাতে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সব ধরনের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তিনি আইনজীবী ও বিচারকদের বিভিন্ন সভায় মামলাজট কমানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সম্প্রতি সিলেট আইনজীবী সমিতির এক সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি নিয়োগসহ বিচারপ্রক্রিয়ায় কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে মামলাজট কমানোর উদ্যোগ সফল হচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলোয় বর্তমানে ৩০ লাখ সাত হাজার ৮০০ মামলা বিচারাধীন। তবে বিচারকের সংখ্যা কম। তিনি বলেন, বর্তমান কাঠামোতে নতুন কোনো মামলা দায়ের না হলেও এই বিচারকসংখ্যা দিয়ে বিচারাধীন মামলাগুলো আগামী ১০০ বছরেও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না। তবে মামলাজট কমাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটির কথা উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে জেলা পর্যায়ের বিচারকরা কাজ শুরু করেছেন। এতে মামলাজট দ্রুত কমে আসবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিচারকরা দিনের পূর্ণ কর্মঘণ্টা কাজ করলে অবশ্যই তার সুফল পাওয়া যাবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। তবে এ জন্য আদালতের জনবল অর্থাৎ সহকারী জজদের ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, দিনের পূর্ণ কর্মঘণ্টা শুনানি গ্রহণ করলে একজন বিচারকের অনেক মামলার আদেশ দিতে হয়। ওই আদেশ দেওয়ার জন্য সাঁটলিপিকার বা ব্যক্তিগত সহকারী প্রয়োজন।

সহকারী জজ আদালতে বিচারকদের ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ : দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশের সহকারী জজ আদালতে বিচারকদের ব্যক্তিগত সহকারী বা প্রতিটি আদালতের জন্য একজন করে সাঁটলিপিকার নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচারকদের দৈনন্দিন কাজ দ্রুত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এই নির্দেশ দেন। এতেও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাইকোর্টকে ভূমিকা রাখার নির্দেশ : দেশের নিম্ন আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলাই হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকে। স্থগিত থাকা এসব মামলা সহজে নিষ্পত্তি হয় না। ফলে মামলাজট বেড়ে যায়। এ ধরনের মামলা চিহ্নিত করতেও সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক চিঠিতে সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন যেসব মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে, তার তথ্য সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোকে। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি আদালতকে মামলা নিষ্পত্তি ও বিচারাধীন মামলার তথ্য পাঠাতে হবে।

স্থগিত থাকা মামলার তালিকা পাওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই সব মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারিক এখতিয়ারসম্পন্ন বেঞ্চে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তালিকা করে সেগুলো শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে অহেতুক বিচার বিলম্বিত হওয়া ঠেকানো সম্ভব হবে বলে আইনজীবীরা মনে করেন। হাইকোর্টের মামলাজটও কমবে।

মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটি : গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য বিশেষ কমিটির সভায় সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জুডিশিয়াল স্ট্রেনদেনিং (জাস্ট) প্রকল্পের আওতায় দেশের সব মহানগর ও জেলা আদালতে মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মহানগর আদালতে এ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আছেন মহানগর দায়রা জজ। আর সদস্য হিসেবে আছেন মহানগর বিশেষ জজ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), মুখ্য মহানগর হাকিম, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, মহানগর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। আর জেলা আদালতের ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা জজকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অতিরিক্ত জেলা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। এ কমিটি জেলায় ও মহানগরে কর্মরত যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি আইনজীবীকে প্রয়োজন অনুসারে সভায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে। কমিটি জেলার সব আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। পরে সভা করে প্রধান বিচারপতির কাছে সুপারিশ পাঠানোর কথা এসব কমিটির। জানা গেছে, ওই কমিটিকে নিয়মিত সভা করতে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন।