ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০১:২৪:০৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক উস্কানি

| ২২ পৌষ ১৪২১ | Monday, January 5, 2015

 

মোবায়েদুর রহমান  : প্রগতিবাদী বলে জাহির করা একটি মহল অষ্টপ্রহর মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কথা বলে। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা শুধু আলেম ওলামাদের ক্ষেত্রেই করা হয়। যদি ভিন্ন ধর্ম হয়, বিশেষ করে ভারতীয় নেতারা যদি সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়, তা হলে মনে হয় ওই মহলটির চোখে সেটা আর সাম্প্রদায়িকতা হয় না। আমরা আন্দাজে কোন কথা বলছি না। আমাদের কথার প্রমাণ মিলবে গতকালকের (০৩.০১.২০১৫) দৈনিক ‘প্রথম আলোর’ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংবাদটির শিরোনাম, ‘ঢাকায় বিজেপির নেতা/ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে’। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কেন্দ্রীয় নেতা তথাগত রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের একজোট হয়ে আওয়ামী লীগকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তথাগত রায় বলেন, আমি বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এটা বলতে পারি না। আমরা একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের মানুষের সঙ্গে স¤পর্ক স্থাপন করি। তবে বাংলাদেশের বিষয়টা ভিন্ন। আপনাদের (উপস্থিতদের উদ্দেশে) বোঝার জন্য বলছি। ভারত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। ভারত সরকার উপলব্ধি করেছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কোনো সরকার হতে পারে না। এখানকার হিন্দুদের জন্যও এর চেয়ে ভালো সরকার কি হতে পারে? তথাগত রায় বলেন, আমরা এটা মনে করি। আপনারা কি মনে করেন, এ দেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকারের ওপর ভরসা করা যায়? ভাবুন, যদি অন্যদের ওপর ভরসা করা না যায়, তাহলে পুরো সমর্থন আওয়ামী লীগকে দিন। প্রকাশ্যে সমর্থন না দিলে আওয়ামী লীগ আপনাদের ব্যাপারে পুরোপুরি বুঝতে পারবে না। বিজেপি’র এই কেন্দ্রীয় নেতা একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন হিন্দু ও ২০ জন মুসলমান ছিল। কিন্তু এখন হিন্দু ৭২ জন আর মুসলমান ২৮ জন। বাংলাদেশে হিন্দু কমার কারণ আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কেন? এর কারণ, অনুপ্রবেশ ও হিন্দুদের কম প্রজনন। তাঁর আশঙ্কা, একদিন বাঙালি হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তথাগত বাবুর ট্র্যাক রেকর্ড
তথাগত বাবু একজন কীর্তিমান পুরুষ। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ায় রয়েছে তার ট্র্যাক রেকর্ড। গত ১৪ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তাকে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথাগত রায়ের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অপরাধে তথাগত বাবুকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছিল চূঁচূড়া আদালত। উস্কানিমূলক ভাষণের অভিযোগে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতারের নজির পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম। চার মাস আগে উস্কানিমূলক ভাষণের অভিযোগে বিজেপি’র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়কে গ্রেফতার করে হুগলি জেলা পুলিশ। তথাগত বাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সৌগত রায়ের দাদা।
বিজেপি’র পক্ষে সুরঞ্জিতের সাফাই
ওই সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল মনে করি না। ‘হিন্দুত্ববাদ’ তাদের রাজনৈতিক কৌশল মনে করি।
এর চেয়ে নগ্ন সাম্প্রদায়িকতা আর কি হতে পারে? আমরা বাংলাদেশে মুসলমান এবং হিন্দুরা ভাই ভাইয়ের মত এক অপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছি। ১৬ কোটি লোকের মধ্যে হিন্দু ভাইদের অংশ ৮% শতাংশ। অর্থাৎ ১ কোটি ২৮ লক্ষ হিন্দু ভাই বাংলাদেশে বসবাস করেন। আমাদের অনেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিন্দু। বাংলাদেশের বহু মুসলমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিন্দু।
হিন্দু ভাইদের অনেকে বাংলাদেশের সরকারী, বেসরকারী, সামরিক এবং বেসামরিক সার্ভিসে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই সংখ্যা বাড়ছে। হিন্দু ভাইদের এই উন্নতিতে একজন মুসলমান ভাইও ভ্রুকুঞ্চন করেন না।
গণতন্ত্রের মূল সুর হলো, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’। ভারত থেকে তথাগত বাবুরা এসে আমাদের এমন শান্ত সমাহিত সৌভ্রাতৃত্ব পূর্ণ সম্পর্কে গ-গোল লাগাবেন কেন? কেন তারা বাংলাদেশের হিন্দু এবং মুসলমানদেরকে আলাদা দুটি সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন? ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোন সময় হিন্দু-মুসলমান হিসেবে চিন্তা করি না। আমাদের কাছে সকলেই বাংলাদেশী। তথাগত বাবুরা যা বলছেন, তার মাধ্যমে তারা কি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উস্কানি দিচ্ছেন না?
সুরঞ্জিত বাবুতো নিজেকে খুব প্রগতিবাদী বলে জাহির করেন। তা হলে তিনি কেন বিজেপি’র মত সাম্প্রদায়িক দলকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে সার্টিফিকেট দেন? আজ ভারতে এই বিজেপিই মুসলমান এবং খৃষ্টানদেরকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। তার পরেও কি সুরঞ্জিত বাবুদের চোখে বিজেপি অসাম্প্রদায়িক?