ঢাকা, মার্চ ২৮, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৬:৩০:৫২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত গাজায় ইসরাইলের জোর হামলায় ৫৫ জন নিহত : হামাস হিজবুল্লাহ ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’: ইসরায়েল সামরিক বাহিনী গাজায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

ব্রিটিশ মুসলিম সংগঠনের খোলা চিঠিতে গাজা পরিস্থিতি, ইহুদিদের প্রতি ঐক্যের ডাক

| ১৮ চৈত্র ১৪২৪ | Sunday, April 1, 2018

 গাজায় ৩০ মার্চ বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৭ জন নিহত হয়

৩১ মার্চ, ২০১৮প্রিয় আরকুশ,

৩০ মার্চ (শুক্রবার) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৭ জন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বোর্ড অব ডেপুটিজ অব ব্রিটিশ জিউশের অবস্থানের সমালোচনা করে একটি খোলা চিঠি লিখেছে মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন। চিঠিতে ঐক্যবদ্ধভাবে বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বিদ্বেষ মোকাবিলার ডাক দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার ভূমি দিবসের ৬ সপ্তাহের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আহত হন ১৫০০ ফিলিস্তিনি। তবে বোর্ড অব ডেপুটিজ অব ব্রিটিশ জিউশের দাবি, এরা সবাই হামাসের দাবার গুটি। ফিলিস্তিনিদের আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট নিরসনের পরামর্শ দেয় তারা। এই অবস্থানের সমালোচনা করে বোর্ড অব ডেপুটিজ অব ব্রিটিশ জিউশ-এর প্রেসিডেন্ট জোনাথন আরকুশ বরাবর খোলা চিঠিটি লিখেছেন মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট আনাস আলতিকরিতি। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকের জন্য চিঠিটির বিস্তারিত ভাষ্যের অনুবাদ প্রকাশিত হলো। চিঠিটির ভাষান্তর করেছেন: ফাহমিদা উর্ণি।গাজায় ৩০ মার্চ বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৭ জন নিহত হয়

শুরুতেই আপনিসহ সমগ্র ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য আমার শুভকামনা। ২৯ মার্চ সোজাসুজি এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে লিভ.ইইউ ক্যাম্পেইনের টুইট প্রত্যাখ্যান করায় আপনাকে এবং বোর্ড অব ডেপুটিজকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ওই টুইটার অ্যাকাউন্টটির পরিচালনাকারীরা এক ধরনের বৈষম্য ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলতে গিয়ে অন্য একটি বিদ্বেষকে উসকে দিচ্ছিলেন। আপনাদের প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ব্যাধির সবগুলো ধরনের বিরুদ্ধে লড়াই না করা পর্যন্ত ধর্মান্ধতা থেকে যাবে। সমাজে যেকোনও ধরনের বর্ণবাদী কিংবা ধর্মীয় বৈষম্যের উপস্থিতি সব বর্ণ, সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ ও গোষ্ঠীর জন্য হুমকি তৈরি করবে।

কিন্তু গাজায় ৩০ মার্চের বিক্ষোভে সহিংসতা নিয়ে তার পরদিনই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আপনারা যে টুইট করেছেন তা নিয়ে গভীর হতাশ হয়ে পড়ি। কেন তা হয়েছিল সে কথা এবার ব্যাখ্যা করছি।

টুইটে ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ বলে আপনারা যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা মূলত ১৫ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহত হওয়া এবং ১৫০০ ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার ঘটনা। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লাখো বিক্ষোভকারীর কেউই সশস্ত্র ছিল না। গাজা সীমান্ত পেরিয়ে কোনও সহিংসতা হওয়ার হুমকিও ছিল না। সেনা সদস্য কিংবা বেসামরিক নাগরিক যার কথাই বলি না কেন কোনও ইসরায়েলিই  হুমকিতে ছিল না, ক্ষতি হওয়া তো দূরের কথা। সকল টেলিভিশন সম্প্রচার, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপের মধ্য দিয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত বেসামরিকদের ওপর স্নাইপার ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭৭৩ টি তাজা গুলি ছোড়া হয়েছে এবং হতাহতদের শরীরের উপরের অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, সীমান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় এক ফিলিস্তিনি তরুণকে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। আপনাদের টুইটে এ ভয়ঙ্কর সত্যকে কেবল অস্বীকারই করা হয়নি বরং গুলিবিদ্ধ তরুণকে হামলাকারী তকমা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সত্যকে উল্টে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, আপনারা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকে বৈধতা দিচ্ছেন। অন্তত এটুকু বলতে পারি যে, এটি সমস্যাপূর্ণ এবং আপনাদের আগের করা প্রশংসনীয় টুইটটির সাপেক্ষে এটি মহা অন্যায়। শুক্রবারের ঘটনা এবং ইহুদিদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বাৎসরিক পাসওভার পর্বের সূচনালগ্নে আপনাদের দেওয়া বক্তব্যের মধ্যে যে কেউই সাদৃশ্য খুঁজতে চাইবে; যে পাসওভার দাসত্ব, অধীনতা ও দমন-পীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার সময়কে প্রতীকায়িত করে। কী করে আপনি আমার কাছে এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন?

তার উপর, আপনারা দাবি করেছিলেন এ বিক্ষোভের আয়োজক হামাস। এটি একেবারেই মিথ্যা। এটি ফিলিস্তিনি জনগণ এবং ওই বিক্ষোভের আয়োজকদের প্রতি ভীষণ অন্যায়। যারা এ বিক্ষোভের একেবারে শুরু থেকে খেয়াল করেছেন তারা জানেন ফিলিস্তিনি তরুণদের একটি দল এ বিক্ষোভ আহ্বান করেছিল। এ বিক্ষোভের নেপথ্যে যারা ছিলেন তারা নিঃসন্দেহে নির্দলীয় ছিলেন। আপনাদের দাবির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও মৌলিক জাতীয় অধিকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার এক শান্তিপূর্ণ প্রকাশের প্রতি ভীষণ অন্যায় হয়েছে। স্বাধীনতা ও মৌলিক জাতীয় অধিকারের জন্য এ ধরনের শান্তিপূর্ণ দাবি প্রকাশকে সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া উচিত ছিল।

আপনারা বলে আসছেন ফিলিস্তিনিদের আলোচনার টেবিলে ফেরা উচিত, তারপরও আপনারা লাখ লাখ ফিলিস্তিনির মনে জমে থাকা হতাশাকে এড়িয়ে যান। ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, সেপারেশন ওয়াল, অবৈধ বসতি, ফিলিস্তিনিদের কাঠামোগত বহিষ্কার, অবৈধভাবে জেরুজালেমকে সংযুক্তিকরণ এবং আরও অনেক কিছুর নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সমাধান প্রস্তাব ৫০ বছর ধরে পূরণ না হওয়ার হতাশা ছিল তাদের মধ্যে। আর সে হতাশার মধ্যেই জেরুজালেম প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেওয়া নির্মম সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। প্রমাণ হয়, ওইসব আলোচনা প্রকৃতপক্ষে নিষ্ফল এবং নিরর্থক। উন্মুক্ত কারাবাসী হিসেবে দিন যাপনকারী ২০ লাখ গাজা উপত্যকাবাসীর অবস্থার কথা চিন্তা করে দেখুন। [জাতিরাষ্ট্রের] স্বীকৃতি ছাড়া, এমনকি এ সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাবের আশা ছাড়াই বিগত ১১টি বছর ধরে তারা সার্বিক অর্থে শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে।

সব ধরনের বৈষম্য আর বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় পেতে হলে আমাদের কাউকেই ন্যায় ও সত্যের মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে ভণ্ডামিপূর্ণ হওয়া যাবে না এবং রাজনৈতিক খেলা চালানো যাবে না। আমি বুঝি না একটি মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর হামলা হলেই তাকে ইসলামোফোবিক হামলা বলার কী কারণ থাকতে পারে। ইসরায়েলি নীতি-পরিকল্পনার সমালোচনাকে কী করে অশুভ ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা যায়, তাও বুঝি না।

আমি নিশ্চিত, আপনি আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত হবেন যে, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে একে অপরের অধিকারের জন্য আমাদেরকে লড়তে হবে। বিশ্বজনীন মানবতার মূলবোধকে লঙ্ঘিত করবে- এমন নীতিমালা যদি কোনও মুসলিম রাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনও দেশ গ্রহণ করে তবে তার সমালোচনা করতে হবে। আমার আশা, দায়বদ্ধতাহীনভাবে যা খুশি করার জন্য অসীম সুযোগ না দিয়ে ইসরায়েলেও এ পথগুলো অনুসরণ করা হবে।

আন্তরিক শুভেচ্ছায়,

আনাস আলতিকরিতি

প্রেসিডেন্ট, মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন