ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৯:৫৫:১৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি ‘মাছ-মাংসের আশা করি না, শেষ ভরসা সবজিতেও আগুন’ দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

বেনাপোল কাস্টমের লকার লুট: দুই মাসেও রহস্য উদঘাটন হলো না

| ২৯ পৌষ ১৪২৬ | Sunday, January 12, 2020

বেনাপোল কাস্টমের লকার লুট: দুই মাসেও রহস্য উদঘাটন হলো না

বেনাপোল কাস্টম হাউজের লকার খুলে ১৯ কেজি ৩৮০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৯ হাজার ২৩০ ভারতীয় রুপি এবং ৩৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা লুটের ঘটনার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক বা চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাস্টমসহ ব্যবসায়ী মহল।এদিকে, কাস্টমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এখনো বহিরাগতদের দাপট থাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আবারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, স্বর্ণ চুরির বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুরির পর কাস্টম হাউস ও চেকপোস্টের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মূল্যবান গুদাম পাহারার জন্য পৃথক সিপাই ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা যায়, বেনাপোলসহ শার্শা সীমান্তেরও চেকপোস্টে আটক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা হয় কাস্টম হাউজের লকারে। গত ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটির সময়ে লকার ভেঙে চুরি হয়ে যায় স্বর্ণ, রুপি ও টাকা। ১১ নভেম্বর সকালে অফিস খোলার পর চুরির বিষয়টি জানাজানি হয়। সকালে অফিসে এসে কর্মকর্তারা দেখেন কে বা কারা কাস্টমের লকার ভেঙে স্বর্ণ, ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। তবে লকারে থাকা আরো স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য সম্পদ অক্ষত অবস্থায় ছিল। আবার কক্ষটির পাহারার দায়িত্বেও কেউ ছিলেন না।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর পর কাস্টম, পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ও র‍্যাবের ইনভেনটরি (চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের তালিকা) অনুযায়ী লকার থেকে ১৯ কেজি ৩৮০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৯ হাজার ২৩০ ভারতীয় রুপি এবং ৩৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা চুরি যায় বলে জানা যায়। এ নিয়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষ পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ চোর সন্দেহে প্রথমে কাস্টমের ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেলেও এক সপ্তাহ পরে তাদের ছেড়ে দেয়। মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২৭ নভেম্বরে মামলা চলে যায় সিআইডিতে। তবে দুই মাস পরও স্বর্ণ চুরির রহস্য উন্মোচন হয়নি। জড়িতদের কাউকে শনাক্তও করতে পারেনি পুলিশ।

বেনাপোল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, চুরির ঘটনা কাস্টমসের ভেতর থেকেই ঘটানো হয়েছে। চোরেরা আগে থেকেই দীর্ঘ দিন পরিকল্পনা করে এ ধরনের চুরি করার সাহস পেয়েছে। কারণ চুরির সময় গোটা কাস্টম হাউসের সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রম্নম থেকে কীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, আর ডুপিস্নকেট চাবি ব্যবহার করে ম্বর্ণ, টাকা লুট করা হলো কীভাবে, সেটাই এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের দেখা উচিত।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন তথ্য-প্রযুক্তির সময় প্রশাসন যদি আন্তরিক হয়ে কাজ করে তাহলে চোর ধরা কোনও কঠিন বিষয় হওয়ার কথা না।

শার্শা উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জান লিটু বলেন, কাস্টমের অবহেলার কারণে সরকারের এ সম্পদ চুরির ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের এত বড় সম্পদ যারা অবহেলায় রেখেছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অপরাধী শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে আগামীতে এমন ঘটনা আবারো ঘটতে পারে।

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, এমন একটা চুরির ঘটনা এখন পর্যন্ত ধরা পড়লো না এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। স্বর্ণ চুরির ঘটনায় কাস্টমের সব অর্জনকে যেন ম্লান করে দিয়েছে। অপরাধিদের দ্রুত ধরা দরকার। যেন আর কেউ ভবিষ্যতে সরকারের সম্পদ চুরি করতে সাহস না করে। তবে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন জানিয়ে পুলিশ বলছে, রিপোর্ট পেলেই জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হবে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান বলেন, এখনও পর্যন্ত স্বর্ণ উদ্ধার বা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলাটি পোর্ট থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তারা বিষয়টি দেখছেন।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ ও টাকা চুরির কোনো কিনারা হয়নি। এটি সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাজ। মনে হয় এই চুরির পেছনে কয়েক মাসের পরিকল্পনা ছিল। জরাজীর্ণ ভবনের কক্ষে প্রহরীবিহীন সিন্দুক রাখা রহস্যজনক। কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ জব্দ করা স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের ব্যাপারে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যশোর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জাকির হোসাইন বলেন, উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না।