ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:২৫:০৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ জানে না কেউ!দিনরাত অন্ধকারে দেশ

| ১৮ কার্তিক ১৪২১ | Sunday, November 2, 2014

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনে (ন্যাশনাল গ্রিড) গতকাল শনিবার সকালে বিপর্যয় (ট্রিপ) হওয়ায় সারা দেশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এরপর বিকেলের দিকে সমস্যার উত্তরণ শুরু হলেও কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় দফায় আবারও গ্রিড বিপর্যয় ঘটে। সেই সঙ্গে বিপর্যয়ে পড়ে গোটা দেশ ও দেশের মানুষ। বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় অসংখ্য কলকারখানা। বাসাবাড়িতে দেখা দেয় পানির সংকট। সিএনজি স্টেশনগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় অসংখ্য পরিবহন। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্ধ হয়ে হাহাকারে পড়েন রোগী ও ডাক্তাররা। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও আইটি সেক্টর প্রায় অচল হয়ে পড়ে। সূর্য ডোবার পর গোটা দেশ ডুবে যায় অন্ধকারে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে আসে চরম স্থবিরতা। এ রকম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারা দেশ অচল হওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে অন্তত চারবার- ১৯৯৮ সালে, ২০০৩ সালে আংশিক এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে (সিডরের কারণে) ও ডিসেম্বরে। গতকালের সংকটের কারণ চিহ্নিত করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দ্রুতই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। তবে গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাতীয় সঞ্চালন লাইনের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঠিক কখন এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশসহ (পিজিসিবি) সরকারের সংশ্লিষ্টরা।জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় প্রথমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সঞ্চালন লাইনটি ছিল ভারত থেকে আমদানি করা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। এতে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় সারা বাংলাদেশের প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় পুনরায় গ্রিড বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় ঢাকার কিছু কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সারা বাংলাদেশে এ সময় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ শুরু হয়। তবে বিকেল ৪টা ২৭ মিনিটে আবারও জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় হলে অন্ধকারে ডুবে যায় বাংলাদেশ। এ সময় আবারও সারা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। উৎপাদন এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে কমতে কমতে ৩০০ মেগাওয়াটে এসে দাঁড়ায়। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির খবর পাওয়া যায়। ৩০০ মেগাওয়াট থেকে উৎপাদন বেড়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। গতকাল রাত ১২টার মধ্যে উত্তরা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, বারিধারা, গুলশানসহ ঢাকার অনেক স্থানেই বিদ্যুৎ চলে আসে। এ ছাড়া মধ্যরাতের ভেতর দেশের ৩০ জেলায় বিদ্যুৎ চলে আসার খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত রাত ৯টার দিকে জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। গোটা রাতও লেগে যেতে পারে। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। জাতীয় সঞ্চালন লাইনের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করার দায়িত্ব পিজিসিবির। পিজিসিবি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির এক চুক্তি করে। এ চুক্তি অনুসারে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। ভারতের অংশে এ বিদ্যুতের সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (পিজিসিআই)। আর বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে পিজিসিবি। ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের পাশাপাশি ভারতের বহরামপুর ও বাংলাদেশের ভেড়ামারায় এইচডিভিসি (হাই ভোল্টেজ ডিরেক্ট কারেন্ট) বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতের বহরামপুর হয়ে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে এ সঞ্চালন লাইনটি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এ লাইনে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আসছিল। সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে হুট করেই ভারত থেকে ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গোটা বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চালন লাইন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় হওয়ার কারণে সারা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পিডিবি ও পিজিসিবি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সমন্বয় করার জন্য ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন করা হয়েছে। এখানে ভারতের সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সরবরাহব্যবস্থার সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হবে না। এ ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রিপ করলে ব্যাকআপ রিলে সিস্টেম থাকে। তাতে অন্য লাইনগুলো ট্রিপ করার কথা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারাটা পিজিবির এক ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতের হরতাল-নাশকতার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদ্যুতের এ বিপর্যয়ের কারণ উদ্ঘাটনে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। একটি বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহম্মেদ কায়কাউসকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যটি পিজিসিবির অধীনে এর নির্বাহী পরিচালক তপন কুমারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গ্রিড বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ আমরাই উৎপাদন করতে পারি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই। গ্রিড সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে এলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেন এমনটি হলো এ জন্য আমরা দুটি কমিটি করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।’ ভারত থেকে ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হওয়ার কারণেই জাতীয় গ্রিডে এমন বিপর্যয় ঘটেছে কি না জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, যদি সে কারণে ঘটেও থাকে তাহলে পিজিসিবির লোড ডেসপাস সেন্টার কী করছিল? তাদের দায়িত্ব ছিল এই সংকট সামাল দেওয়া। সারা দেশ আকস্মিক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রাত ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের ৫০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। রাত ১০টার মধ্যে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ৮০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘রাতের মধ্যেই রাজধানীর সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর আগামীকালের (আজ রবিবার) মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ সংবাদ সম্মেলনে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবির চেয়ারম্যান আবদুহু রুহুল্লাহ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার মঈনউদ্দিন। এর আগে গতকাল বিকেলে রামপুরার আফতাবনগরে অবস্থিত পিজিসিবির প্রধান কার্যালয়ে লোড ডেসপাচ সেন্টারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে বিকেল পৌনে ৪টায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদ্যুতের আকস্মিক বিপর্যয়ের জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী জানিয়েছেন, কোনো দেশের সঞ্চালনের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ যদি লাইন থেকে হুট করে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে প্রায় গোটা দেশেই বিদ্যুতের সঞ্চালন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছিল ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের সঞ্চালন লাইন বিপর্যয়ে পড়ে। যদি তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার আগে আমাদের জানাত তাহলে মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের কারণে কোনো প্রভাব পড়ত না দেশে। কারণ বর্তমানে আমাদের চাহিদা গড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। আর ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট ছাড়াই আমরা ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।’ এই বিপর্যয়ের জন্য তাদের খামখেয়ালিই দায়ী বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। এদিকে গতকাল বিকেলেই ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে  পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুম আল বিরুনী বলেন, ‘বাংলাদেশ যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে ভারত থেকে, তার মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত বাংলাদেশকে দিচ্ছিল। আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হুট করেই ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা পুরো বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গোটা বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় দেখা দেয়। এর ফলে বাধ্য হয়েই বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা কেন বন্ধ হলো- এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে দেওয়ার ফলেই গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে এমনটি বলতে নারাজ পিডিবির চেয়ারম্যান আবদুহু রুহুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ গতকাল দ্বিতীয় দফায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় হওয়ায় ভেড়ামারার ছয়টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জের চালু হওয়া সবকটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ভারত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বিকেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই কেন লাইন ট্রিপ করল। তবে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আমাদের অথবা ভারতের কোনো কারণে লাইন ট্রিপ করেছে কি না, তা খাতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ তিনি জানান, বিকেল ৪টা ২৭ মিনিটে আবারও সাবস্টেশন চালু করার চেষ্টা করলে লাইন ট্রিপ করে। এদিকে কালের কণ্ঠের কলকাতার নিজস্ব প্রতিবেদক সুব্রত আচার্য্য জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে পিজিসিআই আন্তর্জাতিক পাওয়ার স্টেশনে শনিবার কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয়নি। অন্য যেকোনো দিনের মতোই স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে সেখান থেকে। পিজিসিআইয়ের চেয়ারম্যান আর এন নায়েক এবং পরিচালক (প্রকল্প) আই এস ঝাঁ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তাঁদের দাবি, বহরমপুরে যে পাওয়ার স্টেশন রয়েছে, সেখানে এক সেকেন্ডের জন্যও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়নি শনিবার। তাঁরা এর বেশি কিছু জানাতে চাননি। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্ষদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণ স্বরূপ নিমগ কলকাতায় সাংবাদিকদের বলেছেন, এনটিপিসির মাধ্যমে পিজিসিআই জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বণ্টন করার দায়িত্বে রয়েছে। এসব কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। বড় ধরনের কোনো বিদ্যুৎ বিপর্যয় না হলে রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। বহরমপুরে কী হয়েছে, সেটি তিনি বলতে পারেননি। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কথা তিনি জেনেছেন। কলকাতায় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী পিজিসিআইয়ের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলছেন, ‘শনিবার ভারতীয় সময় ১১টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে ভেড়ামারা-বহরমপুর লাইন রয়েছে, তার একটি লাইন ‘ট্রিপ’ করেছিল বা বসে গিয়েছিল। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে লাইন ‘ট্রিপ’ করার পরপরই দ্বিতীয় আরেকটি লাইন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। ভারতীয় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত আছে।’ বিবিসি আরো জানায়, ভারতীয় অংশে লাইন ‘ট্রিপ’ করার কারণেই বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ভারতের বহরমপুরের স্টেশনকে দায়ী করা হচ্ছে বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমের খবর সম্পর্কে কুষ্টিয়ায় সফররত বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের নিজস্ব সমস্যা। আমাদেরই খতিয়ে দেখতে হবে। আমি শুনেছি, বিদ্যুৎ নেই দেশে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তথ্যমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান।