ঢাকা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৬:৫০:৫৮

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

২০ লাখ মুসল্লির পবিত্র হজ পালন

| ১৬ ভাদ্র ১৪২৪ | Thursday, August 31, 2017

সৌদি আরবের মক্কায় ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে মসজিদে নামিরায় আজ বৃহস্পতিবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পবিত্র হজ। হজের প্রধান উকুফে আরাফায় প্রায় ২০ লাখ হজ পালনকারী আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন। ধবধবে সাদা ইহরাম কাপড় পরা মুসল্লিরা জোহর ও আসরের নামাজ এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করেন। এবার বাংলাদেশ থেকে আসা এক লাখ ২৭ হাজার ২২৯ জন হাজি হজ পালন করেন।

বাংলাদেশসহ ১৭২টি দেশের মুসলমানরা হজে অংশ নেন। আর আজকের দিনটিকে বলা হয় আরাফাত দিবস। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ২০ লাখ হাজি যোগ দিয়েছেন এবারের হজে। হাজিদের বিভিন্ন রকম সেবা দিতে কাজ করছে সৌদি আরব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো।

পবিত্র অনুভব আর ঐশী আবেগে উদ্ভাসিত লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে আরাফাতের সব প্রান্তর ছিল কাণায় কাণায় পূর্ণ। জাবালে রহমতে কেবল মানুষ আর মানুষ। ইসলামের ইতিহাসে হজ পালনে শুভ্র বসনে, অভিন্ন আর অবস্থানে অগণিত নারী পুরুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ানিন মাতা লাকাওয়ালমুলক লা শারিকালাক। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার। সব সাম্রাজ্য তোমার।’

সৌদি আরবের স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় আরাফাতের মসজিদে নামিরায় হাজিদের উদ্দেশে পবিত্র হজের খুতবা পাঠ করেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য, বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের রাজকীয় উপদেষ্টা শায়খ ড. সা’আদ বিন আন নসর আশ শাসরি।

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান। আরাফাতের ময়দানের নামিরা মসজিদ থেকে খুতবা দেন নতুন খতিব ড. সা’আদ বিন আন নসর আশ শাসরি। এই খুতবায় মুসলিম উম্মাহর জন্য থাকে নানা দিকনির্দেশনা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী খুতবার পরই স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় জোহরের সময় একই সঙ্গে জোহর ও আসরের কসর সালাতে ইমামতি করেন তিনি। এটাই হজের নিয়ম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখ লাখ হাজির সময় কাটে দোয়া, মোনাজাত ও মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে।

সূর্যাস্তের পর পরই হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে সেখানে রাতযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে হজের দ্বিতীয় দিন ১০ জিলহজ শুক্রবার মিনায় ফিরে যাবেন। মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হাজিরা মক্কায় ফিরে  কাবা শরিফ ‘তাওয়াফ’ ও ‘সাঈ’ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন।

জিলহজের ১১ তারিখ শনিবার মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত।

পরদিন ১২ জিলহজ রোববার মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। আর মক্কায় পৌঁছার পর  কাবা শরিফে স্থানীয়রা ছাড়া হাজিরা বিদায়ী তাওয়াফ, অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।

এবার হজে মক্কা নগরীসহ আরাফাত মিনা মুজদালিফায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজিদের পরিচয়  নিশ্চিতের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও ইলেকট্রনিক ব্রেস লাইট সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাজিদের পিপাসা নিবারণের জন্য ১৫ লাখ গ্যালন জমজমের পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আজ মুসলিম জাতির সব দৃষ্টি ছিল আরাফাতের ময়দানে, কোটি হৃদয়ের স্পন্দন ছিল জাবালে রহমতকে ঘিরে, দেশ-দেশান্তরের লাখো হজযাত্রী যেন শত কোটি মুমিনের প্রতিধ্বনি হয়ে আল্লাহর দুয়ারে সমবেত। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেওয়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে লাখ লাখ হাজির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পবিত্র হজ।

এবার সৌদি আরবের রাজকীয় অতিথি হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ছাড়াও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি, ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ আরো কয়েকজন সংসদ সদস্য হজ পালন করেন।