আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলবে বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া তার দুর্নীতির অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠি ঠিক হয়নি বলে মত দিয়েছে আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সাতটি পর্যবেক্ষণসহ এ রায় ঘোষণা করে।
বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুদককে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠি কেন বেআইনি ও অবৈধ হবে না এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানি নিয়ে এ রায় ঘোষণা করা হল।
পর্যবেক্ষণে আদালত এই বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দেওয়া সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন। এ ধরনের সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত এ নিয়ে করা রুল নিষ্পত্তি করেছেন।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে পাঠানো চিঠিকে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। কারণ কোনো ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
দুদকের উদ্দেশে আদালত বলেন, তদন্তের আগে কোনো ব্যক্তিকে যেন হয়রানি না করা হয়।
আদালতে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠির বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক এএম আমিন উদ্দিন তাদের মতামত দেন।
রায়ের পর খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করেছেন। পর্যবেক্ষণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারাংশ হলো-এ চিঠিটাকে কোনোক্রমে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। এটা আপিল বিভাগের একটি অফিসিয়াল চিঠি। এ চিঠি দিয়ে জনমনে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। মনে হবে জজরা আইনের উর্দ্ধে। কেউ আইনের উর্দ্ধে নন, একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া। প্রেসিডেন্ট ওনার কার্যমেয়াদে কাজটা করবেন।
রায়ের ব্যাখ্যায় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আইনের উর্দ্ধে নন। কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির গন্ধ পায়, দুদক সেটা অনুসন্ধান করতে, তদন্ত করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আদালত বলেছেন, দুদক সাত বছর ধরে অনুসন্ধান করছেন (বিচারপতি জয়নুলের ব্যাপারে) , এ ব্যাপারে কোর্ট অসন্তুষ্ট। একটা অনুসন্ধান করতে কেন সাত বছর লাগবে? যখন একজন অবসরপ্রাপ্ত জজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে তখন তার ডিগনিটি ও প্রেস্ট্রিজসহ সুপ্রিম কোর্টের প্রেস্ট্রিজ সম্পর্কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অথবা দুদককে খেয়াল রাখতে হবে যাতে জনমনে বিভ্রান্তি না ঘটে, এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যেন হয়রানির শিকার না হন।’
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে চলতি বছরের ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক মামলার রায় দেন। অনেক ফৌজদারী মামলায় তার দেয়া রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার। গত ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠি কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেয়া চিঠিটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এরপর গত ৩১ জুলাই বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে মোট ২৩ ফর্দ নথি দুদকের কাছে সরবরাহ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।