দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন আজ বিকেল ৫টায় শুরু হচ্ছে। এ অধিবেশনেই অভিশংসনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণে আনীত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল উত্থাপন ও পাস করা হতে পারে। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভায় বিলটির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। তবে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদে বিলটির বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, অধিবেশনের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সংবিধান সংশোধনসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল এই অধিবেশনে উঠতে যাচ্ছে। আটটি বিল সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে এলে তার বিরোধিতা করবে জাতীয় পার্টি। গতকাল সংসদ ভবনে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদসহ দলের ৪০ এমপির ৩২ জন উপস্থিত ছিলেন।বৈঠক শেষে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবের নীতিগত বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিলটি সংসদে উত্থাপিত হলে খুঁটিনাটি পরীক্ষা করা হবে। বিরোধী দলের মতোই এর বিরোধিতা করা হবে। একই কথা জানান পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এ ছাড়া বহুল আলোচিত সম্প্রচার নীতিমালারও বিরোধিতা করবে জাতীয় পার্টি। দলটির এমপি একেএম মাইদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে জাতীয় পার্টি সংসদে আলোচনা করতে চায়। পুরো দেশবাসীর স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত। যা করা হয়েছে তাতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত ১৮ আগস্ট সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী-সংক্রান্ত বিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আজ শুরু হওয়া সংসদের তৃতীয় অধিবেশনেই বিলটি পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বিচারপতি অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপি বলেছে, একদলীয় শাসন পোক্ত করতে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করছে।
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সংবিধান সংশোধন কমিটিতে আলোচনা হলেও তখন সেটি করা হয়নি। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন এমপি হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। ওই সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।