ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:০৪:৪৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের উদ্যোগে ‘জন্মাষ্টমী’ শোভাযাত্রা

| ২২ ভাদ্র ১৪২২ | Sunday, September 6, 2015

গীতাযজ্ঞ, প্রার্থনা, ঐতিহাসিক মিছিল আর যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে হিন্দুধর্মের প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উৎসব পালিত হয়েছে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। মামা দুষ্ট কংসের কারাগারে জন্ম নেন তিনি। শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনে তিনি ব্রতী ছিলেন। তার জন্মদিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে উৎসবের ছোঁয়া লাগে।

গতকাল রোববার সকাল ৯টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গীতাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। এ উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি রাজধানীতে দু’দিনব্যাপী গীতাযজ্ঞ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সীতাকুন্ড শংকর মঠ ও মিশন থেকে আসা সন্ন্যাসীরা কৃষ্ণপূজা ও গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করেন। বিকেলে ছিল ঐতিহ্যবাহী জন্মাষ্টমীর মিছিল। তবে এ বছর মিছিলটি ছিল অন্য বছরের তুলনায় আড়ম্বরপূর্ণ এবং কৃষ্ণভক্তের আগমন ঘটে বেশি।

সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ও দাপর যুগের অধিকর্তা শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে জন্ম নিয়ে অন্যায়-অত্যাচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তার মাধ্যমে দোর্দ- প্রতাপশালী কংসের পতন ঘটেছে, মানুষ মুক্তি পেয়েছে অত্যাচার ও জুলুম থেকে।

নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি লাভকারী মানুষ তাই তার জন্মদিনটি উচ্ছাস, আনন্দ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে। এ আনন্দ ও অনুভবকে ধারণ করে রাজধানীতে বহু বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জন্মাষ্টমীর মিছিল। কালের প্রবাহে এটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই, বরং বিশ্বের সব অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা হিসেবেই সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেন। রাষ্ট্রপতি অতিথিদের স্বাগত জানান এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি তাদের উন্নত ভবিষ্যৎ কামনা করেন।

এছাড়া হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, কমিউনিটি নেতা, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, আইনজীবী চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রোববার বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশে পলাশী মোড়ে  বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, যুব মহাজোট, ছাত্র মহাজোট এবং মহিলা মহাজোটের  জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা  মিছিল উদ্বোধন করেন সংগঠনের মহাসচিব এড.গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক। অনুষ্ঠানে অনান্য অতিথিদের উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মানিক চন্দ্র সরকার সুকৃতি মন্ডল মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে অধ্যাপক আনন্দ বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি সমীর সরকার,ঢাকা উত্তরের সাধারন সম্পাদক অখিল মন্ডল,হিন্দু যুব মহাজোট এর সভাপতি সুমন কুমার রায়, সিনিয়র সহসভাপতি দেবাশিষ সাহা, সহ-সভাপতি পঙ্কজ হালদার,সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দে, যুগ্ম মহাসচিব সুমন সরকার,গোবিন্দ্র চৌধুরী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফনী ভূষন হালদার ,হিন্দু ছাত্র মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী রাজেশ নাহা, সাধারন সম্পাদক নিহার প্রামাণিক, মহিলা মহাজোট এর ডাঃ সোনালী দাস, এড.প্রতিভা বাগচী সহ দলের সিনয়র নেতৃবৃন্দ ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মিছিলটি সরাসরি পলাশী মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে। বর্ণিল এ মিছিলটিতে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার কৃষ্ণভক্ত অংশ নেন। মিছিলে অনেকেই ছিলেন বর্ণিল সাজে সজ্জিত।

হাজার হাজার ভক্তের মিছিলে তারা হরিনাম, কীর্তন, ভজন ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এদের মধ্যে অনেকেই সেজেছিলেন কৃষ্ণ, কেউ কংস, কেউ রাধা আবার কেউবা রাক্ষসের রূপে।

মিছিলের অগ্রভাগে ছিল মোটর সাইকেল দল, সুসজ্জিত ব্যান্ড দল, বৈচিত্রময় সাজে সজ্জিত একদল তরুণী, হাতি ও জাতীয় নেতারা। মিছিলের পুরোভাগে দুইজন অশ্বারোহী বহন করেছিলেন জাতীয় ও জাতীয় মন্দির পতাকা। জাতীয় পতাকা বহনকারী অশ্বারোহীর পিছনে ছিল জন্মাষ্টমী লেখাসহ মহিলা দল, কেন্দ্রীয় ব্যানার নিয়ে জাতীয় নেতারা, রথসহ হাতি, কীর্তন দল, পর্যায়ক্রমে মিছিল, জলের গাড়ি, এছাড়া শতাধিক ট্রাক ও ভ্যানে করে অসংখ্য মানুষ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।

মিছিলে শ্রীকৃষ্ণের অনুসারী ভক্তরা নেচে-গেয়ে হাততালি দিয়ে পুরো মিছিলে আনন্দ প্রকাশ করেন। এ সময়ে অনেকের মুখে ছিল কীর্তনের সুর।

মিছিলটি পলাশীবাজার থেকে জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, নবাবপুর রোড, ইংলিশ রোড মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ ঐতিহাসিক এ মিছিলের আনন্দ-উদ্দীপনা উপভোগ করেন। তখন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রাস্তার দুপাশের জনতাকে শুভ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান। মিছিলের পাশে এবং পেছনে প্রচুর পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ সময় র‌্যাব সদস্যদেরও মিছিলের পেছনে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল রোববার  সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় গীতাযজ্ঞ। এছাড়া রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন শহরেও রোববার আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে শুভ জন্মাষ্টমী পালন করা হয়েছে।