ঢাকা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২০:১২:৪৬

বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম স্থান শক্তিপীঠ : উন্নয়নে কাজ করছে হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন

| ২৮ শ্রাবণ ১৪২৪ | Saturday, August 12, 2017

Image may contain: one or more people and outdoor

মানিক চন্দ্র সরকার-সেক্রেটারী জেনারেল-হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম স্থান শক্তিপীঠ সুমহঃ যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করা গেলে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক কর্মস্থান করা যেতে পারে। শহিদুল ইসলাম সাগর একজন পর্যটন কর্মী, গত ২৩শে ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত টানা ৯দিন ১৪ জন ভারতীয় পর্যটক (যারা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের টাটা নগর, জামশেদপুর এলাকার বাসিন্দা) নিয়ে যথাক্রমে যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেরিয়েছেন। এবং তিনি তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গনমাধ্যমে তিনি বলেছেন আমি অনুভব করতে পেরেছি যে ভারতীয় পর্যটকরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় তীর্থ স্থান সুমহ দেখতে চায়। কিন্তু অতান্ত দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের পর্যটন বোর্ড বা পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট সেই সব স্থানের কোন তথ্য পাওয়া যায়না। যে কারনে এই ৯দিন বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। মাননীয় পর্যটন মন্ত্রালয়ের সকল কর্মকর্তাদের সবিনয় অনুরধ করব বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিবেন। বাংলাদেশে যে কয়টি শীর্ষ হিন্দু স্থাপনা আছে তার মধ্যে ৬টি শক্তিপীঠ অন্নতম। এছাড়া ধাম, মঠ, আশ্রম, মিশন আছে বেশ কিছু। এগুলোকে সঠিক ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা সহ হিন্দু দেশ গুলোতে প্রচার করতে পারলে দেশে প্রতি বছর থেকে লক্ষ হিন্দু ধর্মের পর্যটক আসত এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান হত বলে আমি মনে করি

হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত ৬ষ্ঠ শক্তিপীঠ ডকুমেন্টরী সংরক্ষন ও উন্নয়নে ধর্মমন্ত্রনালয় ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টে আবেদন করেছে ।

Image may contain: text

Image may contain: text

হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পক্ষথেকে ইংরেজীতে 6 SHAKTIPEETHS IN BANGLADESH নামে একটি ডকুমেন্টরী তৈরী করা হয়েছে আজ বাংলায় এর সংক্ষীপ্ত ইতিহাস তুলেধরা হল…..

শক্তিপীঠঃ সনাতন ধর্মের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। লোকবিশ্বাস অনুসারে, শক্তিপীঠ নামাঙ্কিত তীর্থগুলিতে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর দেহের নানান অঙ্গ প্রস্তরীভূত অবস্থায় রক্ষিত আছে। সাধারণত ৫১টি শক্তিপীঠের কথা বলা হয়ে থাকলেও, শাস্ত্রভেদে পীঠের সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ে মতভেদ আছে।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র গ্রন্থে শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১। শিবচরিত গ্রন্থে ৫১টি শক্তিপীঠের পাশাপাশি ২৬টি উপপীঠের কথাও বলা হয়েছে। কুব্জিকাতন্ত্র গ্রন্থে এই সংখ্যা ৪২। আবার জ্ঞানার্ণবতন্ত্র গ্রন্থে পীঠের সংখ্যা ৫০। ভারতীয় উপমহাদেশের নানা স্থানে এই শক্তিপীঠগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।কলকাতার কালীঘাট, বীরভূমের বক্রেশ্বর, নলহাটি; বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবানীপুর ইত্যাদি বাংলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিপীঠ।

কিংবদন্তি অনুসারে, সত্য যুগের কোনও এক সময়ে মহাদেবের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কন্যা সতী দেবী তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘যোগী’ মহাদেবকে বিবাহ করায় দক্ষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। দক্ষ মহাদেব ও সতী দেবী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী দেবী মহাদেবের অনুসারীদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।

কিন্তু সতী দেবী আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। সতী দেবী তাঁর স্বামীর প্রতি পিতার এ অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন।

শোকাহত মহাদেব রাগান্বিত হয়ে দক্ষর যজ্ঞ ভণ্ডুল করেন এবং সতী দেবীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। অন্যান্য দেবতা অনুরোধ করে এই নৃত্য থামান এবং বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতী দেবীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান (শক্তিপীঠ) হিসেবে পরিচিতি পায়। সকল শক্তিপীঠসমূহে শক্তিদেবী ভৈরবের সাথে অবস্থান করেন। শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১ টি। বাংলাদেশে শক্তিপীঠের সংখ্যা ৬টি তার মধ্যে ভবানিপুর পীঠ, শেরপুর, বগুড়া অন্যতম। বাকী গুলো হল- সুগন্ধা, বরিশাল। চন্দ্রনাথ মন্দির, চট্টগ্রাম। জয়ন্তীয়া ও শ্রীশৈল, সিলেট।  যশোরেশ্বরী, সাতক্ষীরা।

সুগন্ধা শক্তিপীঠঃ বাংলাদেশের বরিশালের ১০ মাইল উত্তরে শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত। এ হিন্দু মন্দিরটি শক্তিপীঠসমূহের অন্যতম। এখানকার ভৈরব ত্রয়ম্বক যার মন্দিরটি ঝালকাঠি রেল স্টেশনের ৫ মাইল দক্ষিণে পোনাবালিয়ায় অবস্থিত। পোনাবালিয়া সুনন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শমরাইল গ্রামের অন্তর্গত। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান। প্রধান উত্সব হচ্ছে শিব-চতুর্দশী।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে সতীর নাক পড়েছিল বলে জানা যায়।

চন্দ্রনাথ মন্দিরঃ বাংলাদেশের সীতাকুন্ডের নিকটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির অন্যতম বিখ্যাত শক্তিপীঠ। সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি । এ এলাকাকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান বলাই ভালো । এখানের সর্বোচ্চ পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির । আর অন্যান্য আরো রয়েছে বড়বাজার পূজা মন্ডপ, ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রম, কাছারী বাড়ী, শনি ঠাকুর বাড়ী, প্রেমতলা, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রাহ্মচারী সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, গিরিশ ধর্মশালা, দোল চত্বর, এন,জি,সাহা তীর্থযাত্রী নিবাস, তীর্থ গুরু মোহন্ত আস্তানা, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটি, জগন্নাথ আশ্রম, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, মহাশ্মশান ভবানী মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিগয়াক্ষেত্, জগন্নাথ মন্দির, বিরুপাক্ষ মন্দির, পাতালপুরী, অন্নপূর্ণা মন্দির ইত্যাদি। সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির তীর্থযাত্রীদের জন্য এক পবিত্র স্থান। এর পুরনো নাম ছিলো “সীতার কুন্ড মন্দির”।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে হিন্দু পবিত্র গ্রন্থসমূহ অনুসারে সতী দেবীর দক্ষিণ হস্ত বা ডান হাত পতিত হয়েছিল।

জয়ন্তীয়া শক্তিপীঠঃ জয়ন্তীয়া বাংলাদেশের সিলেট শহর হতে ৩৮ উত্তর-পূর্বে বাউরভাগ গ্রামে অবস্থিত একটি শক্তিপীঠ। এ শক্তিপীঠের পীঠাধিষ্ঠাত্রী সতী দেবী জয়ন্তী দেবী নামে পরিচিত এবং ভৈরবের নাম ক্রমদীশ্বর। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে সতীর বাম জঙ্ঘা পরেছিল।

শ্রীশৈল শক্তিপীঠঃ শ্রীশৈল বাংলাদেশের সিলেট শহরের ৩ কি.মি. উত্তর-পূর্বে দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর গ্রামে অবস্থিত একটি শক্তিপীঠ। এখানে সতী দেবীর গ্রীবা পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে মহালক্ষ্মী হিসেবে পূজিত হন এবং ভৈরব হচ্ছেন সম্বরানন্দ। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে সতীর গলা পড়েছিল।

ভবানীপুর শক্তিপীঠঃ ভবানীপুর বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার শেরপুরে করতোয়াতটে অবস্থিত সতী মাতা তারার একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। বিভিন্ন সূত্র মতে, করতোয়াতটের এ ভবানীপুরে সতী মাতা তারার বাম পায়ের অলঙ্কার বা বাম পাঁজর বা ডান চোখ বা বিছানা পড়েছিল বলে জানা যায়। ভবানীপুর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত শক্তিপীঠসমূহের মধ্যে অন্যতম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের ভক্তরা সারা বছর এখানে তীর্থে আসেন। এখানে বাম পায়ের নুপুর পড়েছিল।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরঃ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। এ শক্তিপীঠটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ “যশোরের দেবী”। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

গুরুত্বঃ সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা পড়েছিল।