ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৩:৫৫:০৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

বাংলাদেশের মাটিতে জন্মিনি, তবে এখানেই যেন অন্তিম আশ্রয় হয়, এ আমার প্রার্থনা : আনিসুজ্জামান

| ১৩ কার্তিক ১৪২৪ | Saturday, October 28, 2017

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর : বাংলাদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করিনি, তবে এখানেই যেন অন্তিম আশ্রয় হয়, এ আমার প্রার্থনা।
‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অশীতিবর্ষপূর্তি উদযাপন’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে স্বয়ং নিজে এ কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে চন্দ্রাবতী একাডেমির উদ্যোগে ও এবি ব্যাংকের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অশীতিবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমার এ জীবনে কোন অপ্রাপ্তি নেই, ক্ষেদও নেই। আমি শিক্ষক হতে চেয়েছি, প্রাপ্যের অধিক পেয়েছি। ছোটবড় সবার ছাত্র হতে চেয়েছি, সেখানেও শিখেছি। আমি বহু ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছি, আবার তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিও।
তিনি বলেন, জীবনের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছিল বলেই হয়তো আজকের আনিসুজ্জামান হয়ে উঠতে পেরেছি।
অশীতিবর্ষপূতির এ অনুষ্ঠানে পিছনে ফিরে তাকালে দেখি অনেকের কাছেই ঋণী উল্লেখ করে এ মনিষা বলেন, সবার মতোই সর্বাগ্যে তিনিও তাঁর মা-বাবার কাছে ঋণী। বাবা তাঁকে সময় সচেতন হওয়া আর মা তাঁকে সত্যানুবর্তি হতে শিখিয়েছেন। দেশ ও ভাষার প্রতি মায়ের প্রচন্ড অনুরাগ থাকায় ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মা তাঁকে ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে পেটপুড়ে খাইয়ে রণক্ষেত্রে পাঠিয়েছিলেন এবং পুলিশ ধরলে কি বলতে হবে সেটিও শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এ আলোকিত মানুষ তাঁর আনিসুজ্জামান হয়ে উঠার পিছনে অধ্যাপক অজিত গুহ, মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকসহ আরো যাদের অবদান রয়েছে, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের কথাও স্মরণ করেন।
আনিসুজ্জামান তাঁর এ দীর্ঘ জীবনে স্ত্রী ও সন্তানদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর স্ত্রী সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিজ কাঁেধ তুলে নিয়ে তাঁকে ভারমুক্তভাবে কর্মক্ষেত্রে বিচরণের সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর সন্তানগণও কখনই তাঁর সাধ্যের বেশি চেয়ে তাকে বিব্রত করেননি। আর এসব কারণেই তিনি আজকের আনিসুজ্জামান হতে বা এ সম্মানে ভূষিত হতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, তবে তাঁর একটি দুঃখবোধ থেকে যাবে, যদি তিনি বাংলা একাডেমির পুরনো গদ্য সংকলনের কাজটি শেষ করে যেতে না পারেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাদের বাতিঘর। তিনি এ দেশ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।
অনুজ ও বন্ধুপ্রতিম অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে এনসাইক্লোপিডিয়ার সাথে তুলনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, যখনই কোন সমস্যায় পড়ি তার দ্বারস্থ হই। এ মনিষা তার রেফারেন্স বুক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে শব্দ চয়নে বার বার তাকে তাঁর দ্বারস্থ হতে হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, লেখক ও অধ্যাপকের যে চরিত্র হওয়া উচিত আনিসুজ্জামান তা হয়েছেন। তবে তাঁর আরো একটি চরিত্রের গুণ আমরা পাই, সেটি হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এতে কেউ কষ্ট পেলেও তিনি তাঁর ‘সত্য’ বলা থেকে বিচ্যূত হন না।
তিনি বলেন, এ জন্যই আনিসকে নিয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহিত্য, কৃষ্টি, ঐতিহ্য গর্ববোধ ও তৃপ্তিবোধ করতে পারে। আমরাও তাঁকে নিয়ে গর্ব করতে পারি, কারণ তিনি আমাদের এসবের প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের এ বাতিঘরকে নিয়ে আরো আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। এ গুণীজনের উদ্দেশে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন জাহিদ রেজা নূর।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাঙ্গলিক সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরের ধারার শিল্পীবৃন্দ। এর পরেই চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত ‘আনিসুজ্জামান সম্মাননা গ্রন্থ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ৩২০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটির মূল্য ৫০০ টাকা। তবে অনুষ্ঠানস্থলে গ্রন্থটি ৩০০টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
এ গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন বই, উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।